New Honda CBR 150R ৫০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - হাসিবুল

This page was last updated on 31-Jul-2024 05:04pm , By Shuvo Bangla

আমি হাসিবুল হক । আমি আজ আমার প্রিয় New Honda CBR 150R বাইকটি ৫০০০ কিলোমিটার রাইড করার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো । ৫০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ ও বলতে পারেন ।

New Honda CBR 150R ৫০০০ কিমি রাইড রিভিউ

new honda cbr 150r

মটরসাইকেল রিভিউ আমাদের দেশে নতুন কিছু না। জ্ঞ্যানী ব্যাক্তির অভাব অন্তত আমাদের কমিউনিটি তে নেই৷ New Honda CBR 150R কেনার পর অনেকেই রিভিউ জানতে চেয়েছেন, টেস্ট ড্রাইভ দিতে চেয়েছেন কিন্তু সময় এবং সুযোগের অভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনটাই ঠিক মতন দেয়া হয়ে উঠে নি।
আমি কারো হাতে আমার বাইক দিয়ে কমফোর্ট ফিল করি না। বাইকটি নিয়ে ৫০০০ কিলোমিটার + রাইড করেছি এই ৫০০০ কিলোমিটার রাইডের মধ্যে যতদুর বুঝতে পেরেছি তার অভিজ্ঞতা থেকে আজকের এই লেখা।


আমার ইমিডিয়েট আগের বাইক Honda CBR 150R Thai 2016 মডেল এর বাইকটি প্রায় ৯০ হাজার কিলোমিটার চালিয়ে তারপর মাঝখানে কিছুদিন Yamaha R15 V3 indo বাইকটি চালাই এর পরে আমি New Honda CBR 150R বাইকটি ক্রয় করি।
আমি গোটা জিনিস টাকে দুইটা ভাগে ভাগ করে নিচ্ছি লেখার এবং বোঝার সুবিধার্তে৷
পজিটিভ ইমেজ -


new honda cbr 150r red colour
স্মুথনেস - 
বাইকটি এ যাবত কালে আমার এক্সপেরিয়েন্স করা সব চেয়ে স্মুথ বাইক। ইঞ্জিন নকিং এবং চেসিস ভায়ব্রেশন লো আরপিএম এ একেবারেই কম। মাঝে মাঝে ক্লাচ করলে বোঝাই যায় না স্টার্ট অফ নাকি অন।


সিটিং পজিশন -
বাইকটি ইতিপূর্বে সিটিং পজিশনের জন্য সব চেয়ে ফেমাস বাইক Honda CBR 150R Thai । যদি সেটার সাথে কম্পেয়ার করি তাহলে New Honda CBR 150R এর হ্যান্ডেল আরো উচু এবং ড্রাইভিং সিটের কাছাকাছি। তাই ঝুকে চালানোর বিষয় টা একেবারেই কম।
সাসপেনশন- 


USD Suspension বলতেই আমাদের মাথায় একটা জিনিস কাজ করে, স্টীফনেস! অন্তত Yamaha R15 V3 indo থেকে এটাই এক্সপেরিয়েন্স যে USD Suspension অনেক শক্ত। কিন্তু New Honda CBR 150R এর ক্ষেত্রে এটা পুরো ভিন্ন। সামনের USD Suspension অনেক সফট।


ভাংগাচোড়ায় বেশ ভাল কাজ করে৷ পেছনের মনোশক এর বেলায় একটু ভিন্নতা আছে। এটা আগের থাই সিবিয়ারের তুলনায় স্টিফ। তবে Yamaha R15 V3 indo থেকে সফট।
বাইকটির সামনে পেছনে দুটো সাসপেনশন Showa কর্নারিং এ অনেক বেনিফিট দেয়। সিন্ধুকছড়ি তে প্রাণ জুড়ায় কর্নারিং করছি ।
ব্রেকিং সিস্টেম -
ডুয়েল চ্যানেল এবিএস ব্রেকিং সিস্টেম এর সাথে রয়েছে নিশিন এর ক্যালিপার। বেশ ভালো রেস্পনসিভ। ৫০০০ কিলোমিটার চালাতে অন্তত ২/৩ বার বেশ ভাল বেকায়দায় পরে গেছিলাম, এই ব্রেকের উছিলায় উদ্ধার আলহামদুলিল্লাহ। সমস্যা একটাই পেছনের বাইক ব্রেক করে ব্যালেন্স রাখতে পারে না। হয় নাম্বার প্লেটে না হয় পায়ে ধাক্কা দেয় ।


DOHC - 
থাই সিবিয়ারের সব চেয়ে ইউনিক বিষয় ছিল DOHC রেস্পন্স। একটা সার্টেইন আরপিএম এর পর বাইক এতো এনার্জিটিক ফিল দেয়! এই বাইকটির ক্ষেত্রেও বিষয়টা ঐ রকমই কাজ করে। DOHC অন হয়ে গেলে বাইক এক রকম উড়তে থাকে। হাইওয়েতে মোটামুটি অনেকক্ষন ১৩০-১৩৫ ধরে টানছি লীন না হয়েই। ইঞ্জিন সাউন্ড খুব একটা ফাটে না। ভায়ব্রেশন এবং সাউন্ড থাই সিবিয়ারের চেয়ে বেশ কম থাকে হাই আরপিএম এ।
new honda cbr 150r meter view
মাইলেজ -
যদিও প্রিমিয়াম সেগ্মেন্টের বাইকার দের কাছে মাইলেজ কোন প্যারামিটার ই না। তারপরও এটা বাইকের ওভার অল বেনিফিট এর হিসেবে বড় প্যারামিটার। আমি খুব জোড়ে চালাই না, আবার খুব একটা আস্তেও চালাই না। আমার রাইডিং স্টাইলে আমি ৪৮-৫২ kmpl মাইলেজ পাই। যেটা আগের থাই সিবিয়ারে ৩২-৩৫ পেতাম।
স্পেয়ার পার্টস - 
অধিকাংশ বেসিক স্পেয়ার পার্টস আগের মডেলের সাথে মিলে যাওয়ায় অফিশিয়ালি সব কিছুই মোটামুটি পাওয়া যায় আশে পাশেই। আগের বাইক, থাই সিবিয়ার এর পার্টস কেনা ছিল একটা অপরাধ! এমনিতেই পাওয়া যেত না, তার উপর যা ই পাওয়া যেত, ম্যাক্সিমাম ডুপ্লিকেট। এক্ষেত্রে এযাত্রায় কিছুটা মুক্তি পাব বলেই মনে হচ্ছে।
 
নেগেটিভ ইমেজ -
 
প্লাস্টিক এবং কালার -
বাইকের প্লাস্টিক কিট এবং কালার খুব নিম্ন মানের। খুব ইজিলি স্পট পরে যায়। কালার খুব দ্রুত ফেড হয়ে আসে! বহুত পলিশ কোটিং ভুং ভাং করে কোন রকম রাখা যায় আরকি। পাশাপাশি, শুরুর দিকে বাইকে বসলেই প্লাস্টিক এর ক্যাচকোচ আওয়াজে বিরক্তই লাগতো খানিক৷ এখন ক্যাচকোচ কমে আসছে বেশ। তবে এখনো আছে কিছুটা। ভাইজর ও খুব একটা ব্যাতিক্রম না। অল্প কয়দিনেই ঘোলা হয়ে গেছে, আফটার মার্কেট প্রোডাক্ট খুজতেছি।


পিলিয়ন সিট-
এই বাইকের পিলিয়ন সিটের এমন একটা সাইজ দিয়েছে সিটের, যে কেউ বসলেই প্লাস্টিক পার্টের উপরেই বসতে হবে। আর প্লাস্টিক ব্যাক প্যানেল বেশ ভালোই দূর্বল । ক্লাম ক্লিপ সব খুলে ঢিলা হয়ে খুব বাজে অবস্থা ৷ মোটকথা আপনার যদি পিলিয়ন নিয়ে বাইক চালাতে হয় বাইকটি আপনার জন্য না ! আর সিটের নিচে একটা ছোট ন্যাকরা রাখার ও যায়গা নাই !


ব্যাক প্যানেল হিটিং - 
বেশি জ্যামের বাইক চালালে দুই সিটের মাঝখানের প্লাস্টিক পার্ট বেশ গরম হয়ে যায়৷ সিটিং পজিশন একটু পেছালে খুব ভাল ভাবে টের পাওয়া যায় এবং বিরক্ত ও লাগে। সিট হিট হবার এরকম নজির আর কোন বাইকের আছে কিনা আমার জানা নেই।
new honda cbr 150r
চেইন এর শব্দ -
বরাবরের মতই আগের মডেল গুলোর মত এই বাইকেও মারাত্বক ড্রাইভ চেইন নয়েজ হয়। ৩০০-৪০০ কিলোমিটার চালাতে পারি নাই, বিরক্ত হয়ে চেইন পরিবর্তন করে নিয়েছি।


ইঞ্জিন অয়েল - 
ইঞ্জিন ওয়েল ক্যাপাসিটি ১১০০ এম এল। খুবই বাজে এবং বিরক্তিকর একটা বিষয়। দুইটা সিন্থেটিক ওয়েল কেনা মোটেও প্রেক্টিকাল না। তাই যেই একটা সিন্থেটিক ওয়েল ১২০০ এম এল পাওয়া যায়, তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। তবে বাইকের ক্লাচ থাই সিবিয়ারের তুলনায় হার্ড। গিয়ার শিফটিং আগেরটার চেয়ে স্মুথ হলেও ওভার অল বেশ হার্ড।
রিফাইন্ড ইঞ্জিন -
রিফাইন্ড ইঞ্জিন একটা বিশাল বেনিফিট হলেও, আমাদের বাংলাদেশে এটা একটা ডিমেরিট। ফুয়েল খারাপ পরলেই বাইক খুব সুন্দর বোঝায় দেয় নানা উপসর্গের মাধ্যমে। অলরেডি বেশ ভাল ভাবেই টের পেয়েছি। আর দুই একটা পাম্প ছাড়া ঢাকার কোন পাম্পের অবস্থা ভাল না। অগত্যা ক্লিন ফুয়েল, সিএসডি, ডিএল এদের উপরেই নির্ভর করতে হয়।


রেয়ার টায়ার - 
বাইকের সাথের ১৩০ সাইজের স্টক আই আর সি টায়ার টা এতো বেশি বেমানান লাগে! কিনেই ১ম দিন ই আইআরসি টায়ার চেঞ্জ করে ১৪০-৭০-১৭ সাইজের মিশিলিন টায়ার লাগিয়ে নিয়েছি।


এইসব মেরিট ডিমেরিটস এর বাইরে আরো বেশ কিছু ছোট ছোট জিনিস আছে। যেমন পেছনের চাকার সাইজ ১৩০। পুরো বাইকের সাথে খুবই বেমানান, কিনে সাথে সাথেই চেঞ্জ করে নিয়েছি। ক্র‍্যাশ গার্ড লাগানোর কোন ব্যবস্থা নেই।


ফোল্ডিং মিরর টা খুব কাজের জিনিস৷ হেডল্যাম্প যথেষ্ট ভাল। বাইকে বিল্ট ইন পাসিং সুইচ আছে। ওভার অল ড্রাইভিং এক্সপেরিয়েন্স অনেক মজার। খুবই আরামদায়ক রাইড, দিনভর চালালেও কষ্ট হয় না। ভিথ্রি কিংবা জিএসএক্স আর এর মতন অত টা ঝুকে চালাতে হয় না।


হিসেবে হ্যান্ডেল থাই সিবিয়ার থেকেও আপ রাইড। বাইকের হাই টর্ক পাহাড়ে আর জ্যামের মধ্যে অনেক বেনিফিট দেয়৷ ২০০০ কিলো রানিং অবস্থায় সিংগেল এটেম্পট এ ১৪৪ পর্যন্ত পেয়েছি। আরো উঠতো, কিন্তু অসুস্থতার পর দীর্ঘ দিন বাইক না চালানোয় কনফিডেন্স কমে গিয়েছে অনেক।

তবে বাইকের রেস্পন্স অনুযায়ী ১৫০ উঠতে খুব বেশি কষ্ট হবে না বলেই আমার বিশ্বাস। সাড়ে পাচ হাজার কিলোমিটার চালাতে, এখন পর্যন্ত ইঞ্জিন ওয়েল এবং এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন ছাড়া তেমন কোন কাজ করাতে হয়নি, আলহামদুলিল্লাহ।


একটা বাইকের পুর্ণ যৌবন শুরু হয় ১০-১২ হাজারের পর। আশা করি সব কিছু তখন আরো ভাল বোঝা যাবে। একেক জন মানুষের বাইকের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন এক্সপেকটেশন থাকে। কেউ চায় স্পিড কম থাকলেও, কম্ফোর্ট নিয়ে যেন চালানো যায়। আবার কেউ চায় প্রচুর থ্রটল রেস্পন্স।
আমি বাইক নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ যথেষ্ট হ্যাপি। যেহেতু আমি কখনো পিলিয়ন নেই না এবং আমি বাইক প্রচুর যত্ন করতে ভালবাসি, আমার টপ তুলে পোস্ট করার সময় আর আগ্রহ কোন টাই নাই, আমি বেশ ভালই মোটা, এবং আরামপ্রিয়, তাই আমি মনে করি বাইকটি আমার জন্য বর্তমান মার্কেটে বেস্ট বাইক। ধন্যবাদ।
 
লিখেছেনঃ হাসিবুল হক


আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।