মোটরসাইকেল এর ব্রেক সিস্টেম
This page was last updated on 02-Jul-2024 04:31pm , By Ashik Mahmud Bangla
মোটরসাইকেলের ব্রেক সিস্টেম বা ব্রেক ব্যবস্থা হল বাইকেরই একটি সাধারণ অংশ । এটা বাইকের প্রধান নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা যা বাইকটিকে চালানোর উপযোগী করে তোলে । ব্রেক তৈরীর ইতিহাস বাইকের উন্নয়নের ইতিহাসের সাথে জড়িত ।
মোটরসাইকেল এর ব্রেক সিস্টেম
বাইকের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও এটা আসলে চালকের জীবনের রক্ষক । এই ছোট এবং প্রয়োজনীয় অংশটি বাইকের গতিশক্তিকে তাপে পরিণত করতে ব্যবহৃত হয় । এটাই বাইকের গতি থামায় ।
অধিকাংশ বাইক হয় ডিস্ক ব্রেক নয়ত ড্রাম ব্রেক ব্যবহার করে । অন্যান্য উচ্চগতির বাইকে হাইড্রলিক ব্রেক ব্যবহার করা হয় ।
বাইকে ব্রেকের কাজ সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করার প্রধান সমস্যা হল এটি আসলে সাধারণ সাইকেলের ব্রেকেরই শক্তিশালী রূপ । তাই বাইকের ব্রেকের তুলনামূলক বর্ণনা দেয়ার জন্য এ পর্যন্ত বাইকের যেসব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে তা এখানে তুলে ধরা হল ।
মোটরসাইকেল দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। বাইকগুলো যতই সুন্দর হচ্ছে তাদের যন্ত্রগুলো ততই জটিল হচ্ছে । বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে তিন ধরনের মোটরসাইকেলের ব্রেক পাওয়া যায় । নিচে এগুলো তুলে ধরা হলঃ-
মোটরসাইকেলের ড্রাম ব্রেক সিস্টেমঃ
৮০-১৩৫ সিসির কমদামী ও সাধারণ বাইকগুলো সাধারনত ড্রাম ব্রেক সিস্টেম ব্যবহার করে । ১৯০২ সালে লুইস রেনল্ট আধুনিক ড্রাম ব্রেক সিস্টেম আবিষ্কার করেন । ড্রাম ব্রেক সিস্টেমে মূলত এক সেট ড্রাম প্লেট, হুইল সিলিন্ডার, কিছু স্প্রিং এবং কিছু পিন ব্যবহৃত হয় ।
Also read: বাংলাদেশে বছরে ১০ লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্নয়
এর প্রথম উপাদান হল ব্যাক প্লেট যেখানে সকল উপাদান যুক্ত থাকে । মূলত ড্রাম ব্রেকের কারণেই ব্রেক সংঘটিত হয় । হুইল সিলিন্ডার পিস্টনকে পিস্টন কাপ উপরে চালাতে বাধ্য করে যে কারণে ব্রেকের ছুঁচালো অংশ বা সু বাইক থামায় এবং চূড়ান্ত ভাবে ব্রেক সু যেটা দুটো মেটাল সিলিন্ডারকে ওয়েল্ডিং করে তৈরী করা হয়। এটি বাইকে যখন ব্রেক প্রয়োগ করা হয় তখন ব্রেক ফ্লুইডকে চাপ প্রয়োগ করে মাস্টার সিলিন্ডার হতে হুইল সিলিন্ডারে আনে । ফ্লুইড ব্রেক সু কে যন্ত্রের সংস্পর্শে আনে।
এই পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হলে ড্রাম ব্রেকের সাহায্যে চাকার ঘূর্ণন বন্ধ হয় যা হুইল এর সাথে যুক্ত থাকে। এভাবে বাইকের গতি কমে যায় । যখন গতি বেড়ে যায় তখন স্প্রিং গুলো সু গুলোকে পূর্বের অবস্থায় নিয়ে আসে।
মোটরসাইকেলের ডিস্ক ব্রেক সিস্টেমঃ
দ্বিতীয় ধরনের ব্রেক সিস্টেম যেটা আমি এই লেখায় উল্লেখ করেছি সেটা হল মোটরসাইকেলের ডিস্ক ব্রেক সিস্টেম । ডিস্ক ব্রেক সাধারণত উচ্চ গতির বাইক যেমন ইয়ামাহা ফেযার (Yamaha Fazer) বা অন্যান্য দামি বাইক যেগুলো ১৫০ সিসি বা তারও বেশী সেগুলোতে ব্যহৃত হয় । এমনকি স্থানীয় ব্রান্ড ওয়ালটন তাদের ১৩৫ সিসি ও ১৫০ সিসির বাইক গুলোতেও ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করছে ।
ব্রেকের ডিস্ক সমূহ সাধারনত খাঁজ কাটা ও ছিদ্রযুক্ত করে বানানো হয় যাতে সেগুলো ধুতে সুবিধা হয় । ১৯৬৯ সালে হোন্ডা সি.বি ৭৫০ এ ডিস্ক ব্রেক প্রথম ব্যবহারের পর থেকে বাইক ইন্ডাস্ট্রিতে এটাই সর্বাধিক ব্যবহৃত ব্রেক । এই ব্রেকের প্রধান অংশগুলো হল,
১.ক্যালিপার, যাতে একটি পিস্টন থাকে ।
২. রোটর, যা কেন্দ্রে স্থাপন করা হয় ।
ডিস্ক ব্রেকে ব্রেক প্যাডসমূহ হুইলের পরিবর্তে রোটরকে চাপ দেয় এবং এই চাপ তারের পরিবর্তে হাইড্রলিকের মাধ্যমে বাহিত হয় এবং ডিস্ক গুলোর মধ্যে ঘর্ষণ ঘটায় অতঃপর ডিস্ক গুলো বাইককে ধীর করে ।
মোটরসাইকেলের হাইড্রলিক ব্রেক সিস্টেমঃ
তৃতীয় ধরনের ব্রেক সিস্টেম যা উচ্চ গতির বাইকেও অপ্রতুল । কিছু চাইনিজ বাইক যেমন জনসন ও কিনসন বা আকর্ষণীয় কিছু বাইক এ ধরনের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্রেক ব্যবহার করে ।
হাইড্রলিক ব্রেক সিস্টেম ব্রেককে কার্যকর করতে ফ্লুইড বা বিশেষ ধরনের তরল ব্যবহার করে । মাস্টার সিলিন্ডার হতে ব্রেকের কাজ শুরু হয় । প্যাডেলটি মাস্টার সিলিন্ডারের সাথে যুক্ত থাকে । যখন চালক প্যাডেলে চাপ দেয় তখন হাড্রলিক ফ্লুইড নির্দিষ্ট জায়গায় চাপ বৃদ্ধি করে ,ফলে এটা ব্রেকের পিস্টনে চাপ দেয় যে কারণে ব্রেক প্যাড ও হুইলের মাঝে সংঘর্ষ ঘটে এবং ফলাফলস্বরূপ বাইককে সম্পূর্ণ রূপে থামিয়ে দেয় ।
এখন লেখার শেষে এসে বলা যায় আপনার বাইকে কি ধরনের ব্রেক আছে তা সহজেই নির্ণয়যোগ্য । এটা হতে পারে ড্রাম , ডিস্ক কিংবা হাইড্রালিক যা বাইক নিয়ে মজা করার জন্য অপরিহার্য এবং এটা যথাযথভাবে রুটিনমাফিক রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত । কারণ একটি নিরাপদ বাইকই ভালো বাইক ।