Loncin GP 150cc ৮,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - মওদুদ সোহাগ

This page was last updated on 09-Jul-2024 03:45am , By Saleh Bangla

একটাই প্রশ্ন অনেক পরিচিত ভাইদের কাছ থেকে শুনতে হয়েছে:”ভাই আপনি Loncin GP 150cc বাইক কিনেছেন?”প্রশ্নটি এখন ও মাঝে মাঝে শুনতে হয় ! বাইকটি সত্যি অনেক বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে অনেকের মনে। বাইকটি কেনার আগে আমি নিজেও ভাবি নাই এই বাইকটি কিনবো।পরিচিতিদের মধ্যে এই বাইকটি কেউ ক্রয় করে নাই। হঠাৎ একদিন বন্ধু শাহরিয়ার ফয়সাল আমাকে বলে উনার বাইকাটি রাইড দিতে। এক দিন সকালে বন্ধুর দাওয়াতের প্রেক্ষিতে রাইড দিলাম প্রায় ১০০ কিঃ মি। আমি বাইকটি পারফর্মেন্স এ পুরো অভিভূত। বাইকটির ডিউরিবিলিটি নিয়ে মনে সংশয় থাকলেও আপাতদৃষ্টিতে বেশ শক্তপোক্ত মনে হয়েছিল প্রাথমিক ভাবে। 

>>Loncin GP 150cc Price In Bangladesh<<

২০১৮, জানুয়ারি এর ২০ তারিখে কিনে ফেললাম হালের সবচাইতে বিভ্রান্তিকর বাইক Loncin GP 150cc। প্রায় ৮,০০০ কিঃ মি চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে একটি নিরেপেক্ষ পর্যালোচনা করার চেষ্ট করব বাইক প্রেমীদের কাছে। প্রথম ফিল হল “বাইকটি বেশ বড় এবং ভারী” । Loncin GP 150cc প্রথম ২,০০০ কিঃ মি এর পর্যালোচনাঃ ইঞ্জিন ভাইব্রেশন এর সাথে ইঞ্জিন গরম ইস্যু ছিল প্রথম ১,০০০ কিঃমি। এরপর ১ম সার্ভিসিং ও ৩য় বারের মত ইঞ্জিন ওয়েল পরিবর্তনের পর ইঞ্জিন হিট ইস্যু কমে গেলেও ভাইব্রেসন কমছিল না আশানুরুপ। এভাবে ২,০০০ কিঃ মি চলালাম অনেক ভয় আর সংশয় নিয়ে সাথে একটি প্রশ্ন সবসময় তাড়া করত মনের মধ্যে “ভুল বাইক কিনলাম না তো?” 

Also read: ২.৫ লক্ষ টাকার মধ্যে এইচ পাওয়ার বাইক এর দাম | বাইকবিডি September 2023  

  Loncin GP 150cc ২,০০০ কিঃ মি থেকে ৫,০০০ কিঃ মি পর্যন্ত পর্যালোচনা: এর মাঝে অনেক Loncin GP 150cc বাইক ইউজারদের সাথে পরিচিত হয়ে গেলাম এবং আলাপচারিতার মাঝে জানতে পারলাম যে, সবার’ই প্রায় একই সমস্যা“ভাইব্রেশন”,কারো বেশি, কারো কম আবার কারো অনেক কম। বুঝতে পারলাম এইচ পাওয়ার “আমদানিকারক”এর অনভিজ্ঞ মেকানিক দিয়ে বাইক সার্ভিস করানোর কারণে এক এক জনের বাইক এক এক রকম পারফরমেন্স দিচ্ছে। আমরা জানি ভাল্ব বা ট্যাপিড এডজাস্টমেন্ট করতে ফিলার গজ ব্যবহার করা হয় এবং কোম্পানী রিকমেন্ডেড গ্যাপ রাখতে হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল ফ্রি সার্ভিস সেন্টারে কোনরকম ফিলার গজ ব্যবহার না করে বরং শুধু মাত্র হাতের মেজারন্টে দিয়ে ইঞ্জিন এর ভাল্ব / ট্যাপিড এডজাস্ট করে থাকে। বাইক এর সাথে ইউজার ম্যামুয়াল না থাকায় ইন্টারনেট হতে ইউজার ম্যানুয়াল ডাউনলোড দিলাম এবং সঠিক মেজারমেন্ট অনুযায়ী ভাল্ব / ট্যাপিড এডজাস্ট করে নিলাম। ফলাফল আশানুরূপ।বাইকের ভাইব্রেশন অনেক কমে গেল সাথে বাইকটা অনেক হালকা / ফ্রি হয়ে গেল। 

<<Click Here For Specification Of Loncin GP 150>>

ইতিমধ্যে বেশ কিছু হাইওয়ে ট্যুর দিলাম। ঢাকা-কুমিল্লা,ঢাকা-নরসিংদী, ঢাকা,পাবনা,কুষ্টিয়া,রাজবাড়ি,ঢাকা এবং ঢাকা থেকে নাটোর মাত্র ৩ ঘন্টা ৩০ মিনিট একটানা ২১০ কিঃ মি ছিল অন্যতম। এক কথায় অসাধারণ পারফার্মেন্স,ব্যাল্যান্স এবং ব্রেকিং (মূল বিবেচনায়) এর সামান্য। কিন্তু একটি বিষয় খুব খারাপ লাগছিল আর তা হল গতি ৯০ কিঃ মি থেকে ১২০ কিঃ মি পর্যন্ত ভাইব্রেশন সহনীয় মনে হচ্ছিল না। এ ক্ষেত্রে লক্ষনীয় যে গতি ৯০ কিঃ মি এর পূর্বে ভাইব্রেশন খুব সামান্য পর্যায়ে ছিল। Loncin GP 150cc ৫,০০০ কিঃ মি থেকে ৮,০০০ কিঃ মি পর্যন্ত পর্যালোচনাঃ আমি বাইক নিয়ে হাইওয়েতে ঘুরতে পছন্দ করি। কখনো একা,কখনো ২/৩ জন ভাই বন্ধু আবার কখনো গ্রুপ নিয়ে বার বার শংকিত হচ্ছিলাম। এই বাইকটির পারফর্মেন্স কখনো আমাকে আশাহত করেনি। সি বি আর, আর-১৫, জি এস এক্স আর ১৫০, কে পি আর,তারো জিপি ,এস এফ,হাঙ্ক,পালসার (৩ টি মডেল) ফেজার সহ প্রায় সব বাইক এর সাথেই আমি ট্যুর দিয়েছি। কিন্তু কোন পর্যায়ে এই বাইকটির পারফার্মেন্স,পাওয়ার,কন্ট্রোল,ব্যাল্যান্স এর ঘাটতি চোখে পড়েনি।    তবে মনের মধ্যে ওই ভাইব্রেশন ইস্যুটা দিন শেষে অনুভূতিটা ছিল একটু কষ্টের। মনে মনে ভাবছিলাম কি আর করা যায়। ইঞ্জিন ওয়েল গ্রেড টা চেঞ্জ করে মবিল অয়ান ফুল সিনথেটিক ব্যবহার শুরু করলাম। ব্যাস ফিল টা এখন বেশ আমারদায়ক ও সুখকর। আর ইঞ্জিনশব্দ এখন অনেক চমৎকার এবং ভারী ও স্মুথ। Loncin GP 150cc বাইকের এর ভালো লাগা দিক গুলি নিয়ে পর্যালোচনাঃ ১. বাইকটির ইঞ্জিন বেশ পাওয়ারফুল (১৮ ঐচ) এবং এর টর্ক (১৭ এন এম) যা আপনাকে দিবে এক আকর্ষণীয় পুল বা টান। যা সত্যই বেশ উপভোগ্য। ২. বাইক টির ডিজাইন কাঠাম বেশ শক্তপোক্ত,ম্যানলি ও স্পোর্টই লুক তো আছেই। ৩. সিটিং পজিশন কিছুটা আপ রাইড হওয়াতে কব্জি,কোমর,কাধ হাইওয়ে রাইডে কোনরকম ব্যাথা অনুভূত হবে না। ৪. ব্রেক,ব্যালেন্সে বেশ ভালো। আমি বেশ কয়েকবার ইমারজেন্সি ব্রেক করে ভাল ফিডব্যাক পেয়েছি। ৫. ওজন বেশি থাকার কারণে উচ্চ গতিতে বাইকটি বেশ স্ট্যাবল এবং বেশি বাতাসেও বাইক নাড়াচড়া করে না,যা বেশ উপকারি এবং আত্মবিশ্বাস বিড়িয়ে দেয়।    ৬. সাস্পেন্সন প্রথম দিকে বেশ শক্ত হলেও ২/৩ হাজার কিঃ মি রাইড করার পর বেশ নরম হয়ে যায়,ফলে ছোট খাট বাম্প সহজেই এবসরব করে নেয়। সাথে করনারিং অভিজ্ঞতা ও বেশ আস্থাশীল ছিল। ৭. গতি; খুব দ্রুত ১০০/১২০ কিঃ মি গতি উঠে যায় এবং প্রায় সব গিয়ারে শক্তি অনুভূত হয়।গতি কম থাকলেও গিয়ার কমানোর তেমন প্রয়োজন পরে না যা বেশ উপভোগ্য। (আমি টপ স্পিড পিলিওন সহ প্রায় ১৩০ কিঃ মি এবং সিঙ্গেল প্রায় ১৪০ কিঃ মি পেয়েছি, তবে এই বাইক দিয়ে ১৪৫+গতি অনেকে তুলেছেন)। ৮. প্রাইস তুলনয়ায় পারফর্মেন্স। ৯. বাইকের শব্দ,ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করলে বাইকের গতির সাথে শব্দের এক অপূর্ব মিলবন্ধন লক্ষনীয় যা এক চমৎকার অনুভূতি দিবে আপনাকে। Loncin GP 150cc বাইক এর খারাপ দিক গুলি নিয়ে পর্যালোচনাঃ ১. ভাইব্রেসন ( পরবর্তীতে অনেক কমে গেছে এবং সহনীয় পর্যায়ে আছে। নির্ভর করে ইঞ্জিন ওয়েল ও সঠিক ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স) ২. সার্ভিস সেন্টার ও দক্ষ মেকানিক এর অভাব ( যদিও গাজীপুর সার্ভিস সেন্টার এর অবস্থা বেশ ভাল এবং মিরপুর শেওড়াপাড়া তে একটি নতুন সার্ভিস সেন্টার খোলা হয়েছে)।    ৩. কাঁদা ও ভেজা রাস্থায় এই বাইকটি অনেক দুর্বল। ( টায়ার এর ডিজাইন এর কারণে এমনটি হয়,ভাল মানের টায়ার ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে আশা করি)। ৪. চেইন এর অবস্থা খুব একটা ভাল না। ৫২০ পিচ এর মোটা চেইন হওয়ার সত্তে¡ ও খুব দ্রুত লুজ হয়ে যায়।ভালো মানের চেইন ব্যবহার করলে পারফার্মেন্স অনেক বেড়ে যাবে। ৫. হেড লাইটের আলো খুব একটা আশানুররূপ নয়। সিটি রাইড এ কোন সমস্যা না হলেও হাইওয়েতে একস্ট্র লাইট ব্যবহার করা উচিৎ বলে মনে করি। ৬. অনেকেই বল রেসার এর প্রব্লেম ফেস করেছেন। ৭. স্পেয়ার পার্টস ফ্যাক্টরি স্টক এ থাকলে ২/৪ দিন এর মধ্যে পাওয়া যায়,আর স্টক এ না থাকলে অনেক দিন অপেক্ষ করতে হয় যা মোটেও কাম্য নয়।   ৮. মাইলেজ ১ম দিকে ২৫/২৬ সিটিতে এবং ২৮/৩০ হাইওয়েতে। ৪/৫ হাজার কিঃ মি এর পর আমি সিটিতে ৩০+ এবং হাইওয়েতে ৩৫-৩৬ পেয়েছি। ৯. ইঞ্জিন ওয়েল ১২০০ মিলি। বাইকারদের প্রতি অনুরোধ রইল । সব সময় হেলমেট পরে বাইক রাইড করবেন । এটা সেফটির প্রথম ইস্যু । ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলুন । আর অন্য বাইকারদের প্রতি সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধা করুন । লিখেছেনঃ মওদুদ সোহাগ   আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।