Lifan KPR 165R Carb ৩২,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - তুষার
This page was last updated on 31-Jul-2024 10:26am , By Raihan Opu Bangla
আসসালামু আলাইকুম। আমি মোশারেফ হোসেন তুষার । আমার গল্পটি Lifan KPR 165R Carb নিয়ে। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবা কখনই রাজি ছিল না সাইকেল বা বাইক এর ব্যাপারে।
Lifan KPR 165R Carb ৩২,০০০ কিমি রাইড রিভিউ
বাবা সবসময় একটা ভয়ে থাকত যদি কিছু হয়ে যায়। সময়টা শুরু ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে। বাবা নিজের থেকে একটি বাইক কিনে দেয়। আমার ১ম বাইক হচ্ছে walton stylex আমি তো মহা খুশি। কখনও যে নিজের বাইক হবে বা বাবা কিনে দিতে রাজি হবে এত ছিল কল্পনার বাহিরে।
৭-৮ মাস এভাবে চলে যায়। ডিসেম্বরে হঠাৎ এক বড় ভাই Lifan KPR 150 V2 বাইকটি ক্রয় করে। বাইকটি চালানোর পর Lifan KPR 150 V2 এর প্রতি এক প্রকার ভাললাগা শুরু হয়। বাইক এর লুকস , পারফরম্যান্স আমাকে মুগ্ধ করে। তার পর বড়ভাই এর বাইকটি বাবাকে দেখাই। বাবা বাইকটি কিনে দিতে রাজি হয়।
কিন্তু সমস্যা হয় বাবা ১,৫০,০০০ টাকা দিবে। এখন বাকি টাকা কোথায় পাই। সারাদিন শুধু বাইক এর চিন্তা । সব শেষে বাবা যখন টাকা দেয় সেদিন সারাদিন কিসের মধ্যে পার করলাম ভাষায় বলে বুঝানোর মত না।
মাগরিব এর পর বের হই বাইক কেনার জন্য। হাতে টাকা আছে ১,৭০,০০০। বাইক এর জন্য আরও ১৫,০০০ টাকা প্রয়োজন।যেটা কোন ভাবেই ম্যানেজ হচ্ছিল না। কি আর করার, অবশেষে পালসার ১৫০ কেনার জন্য সিদ্ধান্ত নেই। শোরুম এ যাওয়ার পথে হঠাৎ বন্ধুরা ফোন দিয়ে বলে পালসার না কিনতে।
ওদের সাথে দেখা করার পর ওরা ১৫,০০০ টাকা ম্যানেজ করার ব্যবস্থা নেয়। চলে যাই Lifan এর শোরুমে , যেখানে Lifan KPR 150 V2 ১ পিছ বাইক ছিল। নিয়ে নিলাম বন্ধুদের সাহায্যে প্রিয় বাইকটি পথ চলা শুরু লিফান এর সাথে।
এক ভাই বলল ভাই যে বাইক নিছো ৫০০০-১০০০০ কিলো পরে তো সব খুলে পরে যাবে। অনেকে দেখে বললো বাইক সুন্দর হয়েছে । আর কিছু মানুষ বলা শুরু করলো কি বাইক কিনেছো এটা খুব বেশি ভাল না, ইঞ্জিন ভালো না, মাইলেজ ভালো পাবে না আরো কত কি। এভাবেই চলতে থাকল।
১১ জানুয়ারী ৮০০ কিলো তে হঠাৎ করে টুরে চলে যাই বন্ধুদের সাথে মাওয়া ঘাটে। ঐ দিন এর পর KPR এর প্রতি ভালবাসা আরও বেড়ে যায়। ব্রেকিং, কন্ট্রোল, পাওয়ার, পারফরমেন্স। তারপর দিন ১২ জানুয়ারী আমার বাবা মৃত্যুবরণ করেন। এটাই ছিল আমার বাবার থেকে পাওয়া শেষ এবং বেস্ট গিফট।
তারপর ১ বছর বাইকটি আমি চালাই। ২৬+ কিলোমিটারে বাইকটি আমাকে কখনও নিরাশ করেনি। তারপর ফ্যামিলি পেব্লেম এর কারনে বাইকটি বিক্রি করে দেই। বাইক টি যখন সেল করে দিয়ে বাসায় আসছিলাম, মনে হচ্ছিল আমার খুব আপন বা কাছের কোন কিছু আমার থেকে হারিয়ে গেছে।
বাসায় এসে খুব কান্না করেছিলাম। আমার কান্না দেখে আমার ভালবাসার মানুষটিও কান্না করে দিয়ে ছিল এবং আশ্বাস দিয়েছিল ইনশাআল্লাহ আবার হবে। আল্লাহ আবার সব ঠিক করে দিবে। তারপর ২০১৮ সালের জুলাই মাসে Honda CBR150R Indo বাইকটি ক্রয় করি।
বাইকটি ৭-৮ মাস ব্যবহার করার পর আাবার সেল করি। তারপর কেটে যায় আবার ১ টি বছর। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে আলহামদুলিল্লাহ আবার Lifan KPR 165R NBF2 বাইকটি ক্রয় করি। এখন পর্যন্ত বাইকটি ৩২,০০০+ কিলোমিটার রানিং।
৩২,০০০ কিলোমিটারে এখন পর্যন্ত সামনে টায়ার ১বার, চেইন স্পোকেট, ব্রেক প্যাড, এয়ার ফিল্টার, ক্লাচ কেবল, হর্নেট এর সাসপেনশন ছাড়া কিছু পরিবর্তন করা হয়নি। ২ টি কেপিয়ার নিয়ে ৩২+২৬=৫৮ হাজার কিলোমিটারে এক বারের জন্যও মনে হয়নি চায়না বাইক, দুদিন পর হয়ত আমাকে ভুগতে হবে।
লিফান কেনার পর অনেকে বলছে চায়না গাড়ি, দুদিন পর সব খুলে পরবে।পার্টস পাবো না। আলহামদুলিল্লাহ আমি সন্তুষ্ট। কোন কারনে যদি এটা সেল করিও ইনশাল্লাহ আবার লিফান এই ফিরে আসব। সমস্যা কম বেশি সব বাইক এই আছে। লিফান এ ও আছে।
আমার কাছে Lifan KPR 165R Carb এর কিছু সমস্যা -
- টার্নিং রেডিয়াস
- হিটিং ইস্যু
- চেইন
- সাসপেনশন
প্রত্যেকটা সমস্যার সমাধান ও আছে। এই ছিল লিফান এর সাথে এখন পর্যন্ত আমার পথ চলা। ধন্যবাদ Nurul Abser Rasel ভাই এবং তার টিমকে, এরকম একটি বাইক আমাদের মাঝে আনার জন্য।
ধন্যবাদ সবাইকে আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য।
"ভালবাসুন বাইকিং"
"ভালবাসুন আপনার বাইকটি কে"
CKB
LOVE_KPR
লিখেছেনঃ মোশারেফ হোসেন তুষার
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।