KTM Duke 125 টেস্ট রাইড রিভিউ - টীম বাইকবিডি

This page was last updated on 28-Jul-2024 08:17am , By Ashik Mahmud Bangla

ফেসবুক জনপ্রিয় হবার পর থেকেই বাংলাদেশে স্পোর্টস বাইক সেগমেন্টে  সবচাইতে আকাঙ্খিত বাইকগুলো ছিলো Honda CBR এবং Yamaha R15. তখন আমরা KTM Duke 125 এর ছবি দেখতাম এবং ভাবতাম যে, যদি এই বাইকটি যদি বাংলাদেশে আসতো তবে হয়তো সাধ্যের মধ্যে একটি স্পোর্টস বাইক চালানোর সুযোগ পেতাম আমরা। অবশেষে গত বছর ভারতে লঞ্চ হয়েছে ১২৫ সিসির কেটিএম ডিউক  

আজ আমরা আমাদের ৫০তম টেস্ট রাইড রিভিউতে আলোচনা করবো KTM Duke 125 ABS নিয়ে!

  

ktm duke 125

KTM Duke 125 এবিএস এডিশনটি লুকস এবং অনেক টেকনিক্যাল দিক দিয়ে কেটিএম ডিউক ২০০ এর কপি। বাইকটি সম্পূর্নভাবে ভারতে তৈরী করা হয়েছে। এটি একটি নেকেড স্পোর্টস বাইক, যার হেডলাইটটি চিকন ডিজাইনের এবং হেডলাইটের উপরে কোনপ্রকার উইন্ডশীল্ড দেয়া হয়নি। বাইকটিতে আরো রয়েছে কমলা রঙের স্পীডোমিটার, রড হ্যান্ডেলবার, এবং আপরাইট সিটিং পজিশন।

ktm duke 125 handlebar

বাইকটির সিটটি সমান, এবং স্প্লিট। সিটটি কিছুটা শক্ত, এবং আমাদের দেশের রোড কন্ডিশনে লং ডিসট্যান্স রাইডের ক্ষেত্রে এটা কিছুটা আনকমফোর্টেবল হতে পারে। বাইকটিতে এলইডি টেইললাইট, এবং এলইডি ইন্ডিকেটর রয়েছে। ১২৫ সিসি হওয়া সত্ত্বেও বাইকটি মোটেই ছোটখাটো নয়, এমনকি অনেক দিক দিয়েই বাইকটি অনেক ১৫০ সিসি বাইকের চেয়েও মাসকুলার। বাইকটির ইঞ্জিনে আন্ডারবেলী এক্সহস্ট এবং  আন্ডারবেলী কাওয়েল রয়েছে।

ktm duke 125 top speed

   

বাইকটির ফিটিং এবং ফিনিশিং চমতকার, এবং পেইন্ট কোয়ালিটিও অসাধারন। এটা নিজের দাম অর্থাৎ ৩,৪৫,০০০ টাকা অনুসারে বেশ প্রিমিয়াম একটা ফিল দেয়। কেটিএম ডিউক সিরিজটি সম্পূর্ন স্ট্রীটফাইটার একটি সিরিজ, এবং এই বাইকটির মূলমন্ত্রই হচ্ছে শহরে এবং হাইওয়ে, এমনকি অফরোডেও যেকোন টাফ সিচুয়েশনে বাইকারকে সম্পূর্ন সাপোর্ট দেয়া। 

ktm duke taillight

 

বাইকটি ডিজাইন করা হয়েছে সম্পূর্ন আপরাইট আরগোনমিকস অনুসারে, এবং এটা খুবই কমফোর্টেবল। বাইকটি লং ডিসটেন্স ট্রাভেলিং এর জন্যও বেশ ভালো।

KTM Duke 125 Review | Team BikeBD Review

Also read: বাংলাদেশে এসে গেছে KTM Duke 125 2017 এডিশন !!

KTM Duke 125 বাইকে দেয়া হয়েছে Trellis ফ্রেম, যা বাইকের বডি থেকে এক্সপোজড। তারা এক্সট্রা কোন কাউলিং বা কভার দেয়নি বাইকের সিটের নিচের সকল কম্পোনেন্ট এর জন্য, কাজেই যদি কখনো বাইকের ব্যাটারি পরিবর্তন বা রিপেয়ার করতে হয়, তবে সিট খুলে তারপর ব্যাটারী পর্যন্ত পৌছাতে হবে। বাইকটির সুইং আর্ম একটি রিইনফোর্সড ইউনিট, এবং পেছনের মনোশক সাসপেনশনটি WP শক এবজর্ভার।

ktm duke 125 headlight

বাইকটির সামনে রয়েছে ৪৩ মিলিমিটারের আপসাইড ডাউন টেলিস্কোপিক ফ্রন্ট সাসপেনশন। সাসপেনশনটি রাইডারের রাইডিং স্টাইল অনুযায়ী এডজাস্ট করে ২৫ মিলিমিটার পর্যন্ত নামিয়ে আনা সম্ভব। বাইকটির সামনে ১০ স্পোক এলয় হুইলের রিম রয়েছে। বাইকের সামনে ১১০ সেকশনের টায়ার এবং পেছনে ১৫০ সেকশনের টায়ার রয়েছে যা একটা ১২৫ সিসি বাইকের জন্য যথেষ্টর চাইতেও বেশি।

ktm duke 125 abs

এবার আসা যাক বাইকের অন্যতম মূল আকর্ষনে। বাইকটির সামনে তারা দিয়েছে ৩০০ মিলিমিটার ডিস্ক এবং ৪ পিস্টন ক্যালিপার সমৃদ্ধ ডিস্ক ব্রেক, যার সাথে সংযুক্ত রয়েছে বশ এর সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস। বাইকটির পেছনে দেয়া হয়েছে ২৩০ মিলিমিটার এর সিঙ্গের পিস্টন ক্যালিপার সমৃদ্ধ হাইড্রলিক ডিস্ক ব্রেক। বাইকটিতে এন্টি লিফট সিস্টেম রয়েছে যা হার্ড ব্রেকিং এর সময় বাইকের পেছনের অংশটি উচু হয়ে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করবে।

ktm duke 125 brakes

এবার কথা বলা যাক বাইকটির ইঞ্জিনটি নিয়ে। বাইকটির ইঞ্জিনটি একটি ওয়াটার কুলড ইএফআই ইঞ্জিন। সিঙ্গেল সিলিন্ডারবিশিষ্ট এই ইঞ্জিনটিতে ৪ টি ভালভ এবং DOHC ভালভ ট্রেইন রয়েছে। এসকল কিছু নিয়ে ১২৫ সিসি মোটরসাইকেলটি ১৪.৭৬ বিএইচপি শক্তি এবং ১২ নিউটন মিটার টর্ক উৎপন্ন করে যা একটি ৬-স্পীড গিয়ারবক্স এর মাধ্যমে বাইকের পেছনের চাকায় পৌছানো হয়। বাইকটির ড্রাইভট্রেইনে X-Ring চেইন ব্যবহার করা হয়েছে যা খুবই ভালো এবং টেকসই। KTM এর দেয়া তথ্যমতে বাইকটির ক্যামশ্যাফটে একটি কার্বন কোটিং ব্যবহার করা হয়েছে, যা বাইকের ইঞ্জিনের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করবে।

ktm duke 125 mileage

রাইডিং এক্সপেরিয়েন্স  বাইকটিতে বসার সাথে সাথেই মনে হবে যে আপনি প্রিমিয়াম কিছু একটার উপর বসে আছেন। এরপরে রয়েছে কমলা রঙের স্পীডোমিটারটা, যেটাতে প্রচুর ফিচার রয়েছে। উলেখযোগ্য একটি ফিচার হচ্ছে বাইকটির সাইড স্ট্যান্ড যদি ফেলে রাখা থাকে, তবে বাইকটির ইঞ্জিন অটোমেটিকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। বাইকটির স্পিডোমিটারে একটি ছোট আকারের রেভ কাউন্টার রয়েছে, এবং এর সাথে রয়েছে একটি ছোট কম্পিউটার যা আপনাকে এভারেজ স্পীড এবং মাইলেজ এর মতো প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দেবে। 

তবে, এই স্পীডোমিটারে কোন ঘড়ি নেই। শুরু থেকেই বাইকটির গিয়ার শিফট খুবই স্মুথ। ইঞ্জিনটি রিফাইন্ড না, এবং আন্ডারবেলী এক্সহস্ট খুব স্মুথ সাউন্ড উৎপন্ন করে না তবে এটাই KTM Duke এর বৈশিষ্ট্য। এটা বন্য হতে চায়, এবং নিজের মতো করে স্বাধীন থাকতে চায়। বাইকটিতে তেমন একটা রেডি পিকআপ নেই, এবং বাইকটির টর্ন ৬৫০০ আরপিএম এর আগে হিট করে না। তবে, মিড রেঞ্জ আরপিএম থেকে খুব দ্রুতই ৯৫০০ আরপিএম এ পৌছায় বাইকটি। বাইকটির টর্ক কাজ করা শুরু করার সাথে সাথেই ইঞ্জিনের ভাইব্রেশন শুরু হয়। 

ktm duke 125 indian edition top speed

KTM Duke 125 – মাইলেজ এবং টপ স্পীড

শহরের রাস্তায় রাইড করার ক্ষেত্রে বাইকটি যদি স্মুথলি রাইড করা হয় তবে বাইকটি প্রায় ৩২ থেকে ৩৫ কিলোমিটার পার লিটার মাইলেজ দেয়। হাইওয়েতে বাইকটির মাইলেজ প্রায় ৪০ কিমি/লিটার পাওয়া যায়। আমাদের টেস্ট রাইডের সময় ৭৮ কিলোগ্রাম ওজনের রাইডার সহ বাইকটির টপ স্পীড আমরা পেয়েছি ১১২ কিমি/ঘন্টা, যা আমাদের কিছুটা আশাহত করেছে।

ktm duke 125 speedometer

বাইকটির ইঞ্জিন একটি ডার্টি নয়েজ উৎপন্ন করে, এবং আরপিএম বাড়ার সাথে সাথে বাইকটি আরো লাউড হতে থাকে। পেছনের মোটা চাকা এবং চ্যাসিস এর কারনে যেকোন মুহুর্তে ইচ্ছেমতো বাইকটি যেকোনদিকে নেয়া যায়। বাইকটির পেছনের ১৫০ সেকশনের টায়ার বাইকটিকে হাই স্পীড কর্নারিং এ অনেক সাহায্য করে, এবং ব্রেকিং এ এটা অনেক ভালো পারফর্ম করে। 

বাইকটির সামনের চাকার এবিএস যেকোন পরিস্থিতিতে, এমনকি ভেজা রাস্তাতেও ব্রেকিং এর সময় বাইকটিকে স্টেবল রাখে, তবে ভেজা রাস্তায় পেছনের ব্রেকে বেশি প্রেশার দিলে পেছনের এমআরএফ টায়ারটি আটকে গিয়ে স্লাইড করে। এর সমাধান হচ্ছে, যদি আপনি একলা রাইড করেন, তবে বাইকের পেছনের টায়ারে মিনিমাম টায়ার প্রেশার রাখুন। বাইকটির সাসপেনশনগুলো, বিশেষত এর রিয়ার সাসপেনশন খুবই ভালো ফিডব্যাক দেয়। ভারী পিলিয়ন নিয়ে রাইড করার পরেও আমরা বাইকের সাসপেনশন থেকে বেশ ভালো মুভমেন্ট পেয়েছি, এবং শুরু থেকেই সাসপেনশনটা বেশ সফট ছিলো। 

সামনের আপসাইড ডাউন সাসপেনশনটি যেকোন প্রকার রাস্তায়, বিশেষত অফ-রোডে এটা খুবই ভালো পারফর্ম করে। বাইকটির টায়ার গ্রিপটা যদি আরেকটু ভালো হতো তবে এটা খুবই ভালো একটি অফরোড মোটরসাইকেল হতে পারতো।

ktm duke 125 cornering

 শহরে রাইড করার জন্য এটা খুবই মজাদার একটি বাইক। এবং, সারাদিন শহরে রাইড করার পরে যদি আপনি বাইকটি নিয়ে শহরের বাইরেও যেতে চান, তবে এটা নিয়ে নদীর পাড়েও রাইড করা সম্ভব। বাইকটির শক্তিশালি হেডলাইটের কারনে রাতে বাইকটি রাইড করা কোনপ্রকার সমস্যার সৃষ্টি করে না। তবে, এর সিটটা কিছুটা শক্ত প্রকৃতির হওয়ায় এটা লম্বা রাইডিং এ কিছুটা আনকমফোর্ট তৈরী করতে পারে, যেটা রাইডারকে মানিয়ে নিতে হবে। 

পেছনের মাডগার্ডটি বৃষ্টির দিনে পিলিয়নকে কাদা বা বৃষ্টির পানি থেকে একদমই সুরক্ষিত করে না। আমার মনে হয় অতিরিক্ত একটি টায়ার গার্ড না দিয়ে তাদের উচিত ছিলো মাডগার্ডটিকেই আরো একটু বড় করে দেয়া।

ktm duke 125 mileage 

KTM Duke 125 – ভালো দিকসমূহঃ

  • বাইকের বিল্ড কোয়ালিটি এবং ফিনিশিং খুবই ভালো
  • বাইকটি শহরে এবং হাইওয়েতে খুবই কমফোর্টেবল
  • বাইকটির কর্নারিং সক্ষমতা খুবই ভালো
  • সিঙ্গেল চ্যানেল এবিএস খুবই ভালো কাজ করে
  • হেডলাইটটি শক্তিশালি

KTM Duke 125 – খারাপ দিকসমূহঃ

  • বাইকটির পারফর্মেন্স ফিগার অনুযায়ী টপ স্পিডটা হতাশাজনক
  • বাইকটির তেমন কোন রেডি পিকাপ নেই।
  • ১২৫ সিসি বাইক হিসেবে মাইলেজ খুবই কম
  • বাইকটির দাম খুবই বেশি
  • ঢাকার বাইরে বাইকের স্পেয়ার পার্টস এবং সার্ভিস পাওয়া দুঃসাধ্য

ktm duke 125 design

 এই বাইকটি মূলত তাদের জন্য যারা Honda বা Yamaha এর প্রস্তুতকৃত কোনকিছু চাচ্ছেন না কিন্তু একটি প্রিমিয়াম নেকেড স্পোর্টস মোটরসাইকেল রাইড করতে চান। আমার মতে বাইকটি আরো বেটার হতো যদি তারা পেছনে ১৫০ সেকশন এর টায়ার না দিতো, সেক্ষেত্রে বাইকটি আরো বেশি গতিসম্পন্ন হতো, আরো এফিশিয়েন্ট হতো এবং আরেকটু ওয়াইল্ড হতো।