Honda Cb Hornet 160R ৯০০০ কিলোমিটার টেস্ট রাইড - তানিম
This page was last updated on 18-Jul-2024 12:34pm , By Raihan Opu Bangla
আমি তানিম। আমি কুমিল্লা বসবাস করি । পেশায় আমি একজন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট DMF। আমি ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমে বাইক ক্রয় করি। বাইকটি হচ্ছে Honda Cb Hornet 160R । আজ আমি আমার এই বাইকটি নিয়ে ৯০০০ কিলোমিটার রাইডের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাচ্ছি ।
Honda Cb Hornet 160R ৯০০০ কিলোমিটার টেস্ট রাইড - তানিম
আমার বাইকের প্রতি দুর্বলতা আছে সেই ছোটবেলা থেকে । আমার এক বড় ভাই CDI 100 বাইক চালাতো । তার বাইক চালানো দেখে খুব ইচ্ছে হতো যদি আমিও বাইক চালাতে পারতাম। আমার বয়স তখন ৮-৯ বছর হবে। ভাইয়া খুব আদর করত তাই বাইকে উঠে বসলে বকা দিতো না । একদিন বাইক রেখে দুপুরের খাবারের পর ভাইয়া ঘুমাচ্ছে, আমি বাইকে উঠে স্টার্ট দেওয়ার জন্য কিক দিতে থাকলে এক সময় বাইক নিয়ে পড়ে যাই।
সেই দিন ভাইয়ের ভয়ে বাড়ির বাহিরে লুকিয়ে ছিলাম। এর পরে বাড়িতে যেই বাইক নিয়ে আসে এটায় উঠে বসতাম, দেখতাম কেন জানি ভালো লাগতো। এরপর আমি তখন ৮ম শ্রেনীতে পড়ি আমার আর একটা ভাই বিদেশ থেকে আসে ২০০৯ এর কথা ওনি Bajaj Pulsar 150cc একটি বাইক কিনে। ভাইয়াকে অনেক বার বলতাম চালানো শিখাতে আব্বুর ভয়ে দিতো না ।
একদিন বলে কিরে চালাবি নাকি? সেই দিনই শুরু হয় বাইক চালানোর হাতেখড়ি। SSC দেওয়ার আগে থেকে আব্বুকে বলতাম বাইক কিনে দিতে, আব্বু কখনোই রাজি ছিলো না। রেজাল্টের আগে অনেক কিছুর পর রাজি হয় আব্বু তাও শর্ত ছিল যদি কেউ অভিযোগ করে জোরে বাইক চালাই তাহলে বাইক নিয়ে যাবে।
অবশেষে আব্বুর এক বন্ধুর থেকে Bajaj Discover 100cc বাইকটি কিনে দেন। সেদিন বাইকের চাবি যখন হাতে ওই সময়ের অনুভূতির কথা বলে বুঝাতে পারবো না। অনেক দিন চালানোর পর মনে হচ্ছিল বাইকটি আমার সাথে চলতে পারছিল না পুরানো হয়ে গিয়েছে। বাইকটি বিক্রি করে দিলাম।
Click To See Honda Cb Hornet 160R First Impression Review In Bangla – Team BikeBD
প্রায় ৪মাস পর Bajaj Pulsar 150cc কিনলাম তাও কিছু দিন চালানোর পর মনে হলো আর মজা পাচ্ছি না এটাও বিক্রি করে দিলাম। প্রায় ৬মাস বাইক ছিলোনা। ২০১৯ এর প্রথমে বাইক বিডির অনেক রিভিউ দেখতাম নতুন কি বাইক নেওয়া যায়। আমার স্পোর্টস বাইক পছন্দের ছিলো কিন্তু মনে হতো এটা অনেক দাম আর এটার অনেক খরচ।
আমি তখনও বেকার মানুষ এত খরচ বহন করতে পারবো না। তাই রিভিউ দেখতাম হোন্ডার কি গাড়ি নেওয়া যায় ট্রিগার বাইক দেখতাম অনেক ভালো তবে আমার জন্য নিচু হয়ে যায়, আমি ৬ফিট লম্বা ওজন ৭৫কেজি।
তখন দেখলাম বাংলাদেশে নতুন দুটি বাইক আসল TVS Apache RTR 160 4V এবং Honda Cb Hornet 160R । আমার এক বন্ধু TVS Apache RTR 4V কিনে আমি বাইকটা চালিয়ে দেখলাম আমাকে আনেকে বলছিল বাইকটা কিনার জন্য আমার ভলো লাগেনি।
আমার দুর্বলতা ছিলো হোন্ডার বাইক কিনবো। হোন্ডা শোরুমে গেলাম, কুমিল্লা সামিয়া মটরসে ম্যানেজার ভাই নিজে একটি Honda Cb Hornet 160R চালাতেন উনি নিজের বাইক আমাকে চালাতে দেন, ওনাদের ব্যবহার খুবই ভালো ছিলো। কিছুটা চালানোর পর মনে হলো মনের মত একটা বাইক নেয়া যায়।
বাইকটিতে ৫ টি গিয়ার, ১৬০ সিসির একটি পাওয়ারফুল ইঞ্জিন, ডিক্স ব্রেক, টিউবলেস মোটা চাকা ১৪০/৭০, আকর্ষনীয় ডিজিটাল মিটার, নতুন লুকস ঠিক যেমনটা আমার দরকার এবং পছন্দ ছিল । কয়েক দিন সময় লাগে টাকা মেনেজ করতে ততদিন আর মন মানছিলো না। শেষ পর্যন্ত টাকা নিয়া বন্ধুকে কল করি ২জন গিয়ে ১,৮৯,৯০০/- টাকা দিয়ে বাইকটি ক্রয় করি।
যখন চাবিটা হাতে পেলাম অনেক অপেক্ষা করে,অনুভূতি তো প্রকাশ করার মত না। বেরিয়ে সারাদিন ঘুরলাম। Honda bangladesh থেকে ফ্রি ২বছরের রেজিষ্ট্রেশন করে দেয়। আজ প্রায় ৯,৫০০ কিলোমিটার রাইড করলাম কোনো ঝামেলা ছাড়া। কয়েকটা ট্যুর দিলাম সিনিয়র ভাইয়ের সাথে। সব সময়ে বের হওয়ার আগে হেলমেট পারে বের হই। আর বাইকের সার্ভিসিং রেগুলার করে রাখি হোন্ডার সার্ভিস সেন্টার থেকে ।
Click To See Test Ride Review In Bangla – Team BikeBD
Honda Cb Hornet 160R বাইকে আমি Motul 10w30 সেন্থেটিক ইন্জিন অয়েল ব্যবহার করি। বাইকের কিছু স্টিকার ডিজাইন করছি আমি নিজেই। রাতে হাইওয়ে রাইডের জন্য আলো কম হয়ে যেতো তাই A7 ফগলাইট লাগিয়েছি। সিকিউরিটির জন্য Tass Lock ব্যবহার করি। ব্রেকিং পিরিয়ডে ৪০০০-৫০০০ RPM এ ৪৫-৫০ কিলোমিটার স্পীডে ব্রেকিং মেইনটেইন করে চালাতাম । তখন মাইলেজ ৪৫+ কিলোমিটার পেতাম প্রতি লিটারে এখন ৪০+পাই।
এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১১৮ স্পিড তুলতে সক্ষম হয়েছি । এই ১ বছর বাইকের তেমন কিছু পরিবর্তন করিনি। ব্রেক-সু, প্লাগ ৮০০০ কিলোমিটার পর পর পরিবর্তন করি। এই বাইকে কখনো খারাপ লাগা কাজ করেনি। যখনি চালাই নতুনের মত লাগে। নিজে ওয়াশ করি, খুব যত্ন নিয়ে রাইড করি।
Honda Cb Hornet 160R বাইকটির কিছু ভালো দিক-
- বাইকটির লুক এক কথায় অসাধারণ
- টায়ারের গ্রিপ ভালো
- ব্রেকিং এবং ব্যালেন্স ভালো
- রাইডিং পজিশন খুবই ভালো
- সিটি এবং হাইওয়ে উভয় রাস্তার জন্য পার্ফেক্টর
- মাইলেজ অনেক ভালো
Honda Cb Hornet 160R বাইকটির কিছু খারাপ দিক-
- বাইকটির সুইচ কোয়ালিটি ভালো না
- বাইকটির বিল্ড কোয়ালিটি তুলনা মূলক ভাবে খারাপ
- হেডলাইট এর পাওয়ার কম
- রেডি পিকাপ নাই
- ইঞ্জিন কিল সুইজ নেই
Honda Cb Hornet 160R বাইকটি রাইড করে এটাই বলতে পারি এই বাজেটে এই বাইকটি সেরা বাইক। টুরের জন্য খুবই ভালো। আমি আমার বাইকটি নিয়ে যথেষ্ট হ্যাপি । ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ তানিম
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।