Hero Honda CBZ Xtreme মালিকানা রিভিউ লিখেছেন বেল্লাল হোসেন
This page was last updated on 09-Jul-2024 12:57pm , By Saleh Bangla
Hero Honda CBZ Xtreme মালিকানা রিভিউ
কেমন আছেন সবাই ? আমি মো বেল্লাল হোসেন। আমি একজন ব্যবসায়ী, এবং সাথে বাইক রাইডার ও বটে। আমি থাকি শাহাজাদপুর । আজ আমি আপনাদের সাথে আমার বাইক রাইড নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে যাচ্ছি । বর্তমানে আমি যে বাইকটি রাইড করছি সেটা হচ্ছে Hero Honda CBZ Xtreme । হয়ত এই অভিজ্ঞতা আপনাদের জন্য নিশ্চই ভালো কিছু উপহার দিবে ।
বাইক এবং বাইকিং নিয়ে সকলের ই কম বেশি সবার আগ্রহ থাকে আর ঠিক তেমনি আমার ও কম ছিল না। আমি বাইক চালাতে শিখেছি প্রায় ৬ বছর এর মত হলো। বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। কি বিরক্ত হচ্ছেন না তো!! প্রথম অভিজ্ঞতা হচ্ছে বাইক চালাতে গিয়ে বিপদে পরেনি বা ব্যাথা পায়নি এমন হয়তবা খুজে পাওয়া যাবে কিনা আমি জানি না।
তবে আমি বাইক যে দিন প্রথম চালবো সেই দিন স্কুল ফাকি দিয়ে কয়েক জন বন্ধু মিলে বাইক নিয়ে বাসা হতে অনেক দূরে চলে যাই। কেননা আমি বাইক যে চালাতে চাই বা শিখতেছি সেটা পরিবার এর কাউকেই না জানিয়ে।
যাইহোক যে বাইকটা এনেছিলাম সেটা কিক দিয়ে স্ট্রাট করতে হয় । তো আমি যখন বাইক এ বসলাম এবং আমার বন্ধু যখন আমাকে কোনটা কি সে গুলো বলছিল তখন আমি নিজের অজান্তেই গিয়ার দিয়ে দিছিলাম। তার পর আর কি। যেই না কিক দিলাম অমনি ফস করে বাইক দিল লাফ, আর আমিও চিতপটাং হয়ে গেলাম ।
ওই দিন আর বাইক চালালাম না। ওরা চালাচ্ছিল সেটা শুধু দেখতে ছিলাম। ৮দিন এর দিন আমি বাইক চালাতে পুরোপুরি সক্ষম হই। যাইহোক এবার আসি আমার বাইকের বিষয়ে কিছু কথা বলতে। বাইক এর সাথে প্রথম দেখা । আমার বাইক কিনতে যাবার ঘটনা খুবই স্বাভাবিক ছিল । আমি যে মাঝে মধ্যে বন্ধুর বাইক রাইড করতাম সেটা বাবা মোটেও পছন্দ করতেন না। অন্যের কোন কিছু ব্যবহার করার বিপক্ষে ছিলেন তিনি।
তারপর একদিন বিকেলে অফিস শেষ করে বাসায় এসে উনি আমাকে ডাকলেন । তো আমি তার কাছে গেলাম । বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে বাইক কোনটি ভালো । তো আমি স্বাভাবিক ভাবে ভেবে বল্লাম Hero Honda CBZ Xtreme । তো বাবা বললেন চলো আমার সাথে একটু মার্কেট এ যাবি ।
আমি তার সাথে সাথে গেলাম। তো উনি আমাকে শোরুমে নিয়ে গিয়ে বললেন, তোমার পছন্দের বাইক কি এখানে আছে কিনা দেখ? আমি তো হতভম্ব হয়ে গেছি । কি ব্যাপার কি হতে চলছে আজ। আমি চোখ বুলাতেই দেখি আমি প্রিয়তমা Hero Honda CBZ Xtreme আমার পাশেই।
আমি যেন বাইক কে দেখে ফিদা হয়ে গেছি। অতপর বাইক এর চাবি হাতে পেয়ে আমি বাবার গলা জরিয়ে ধয়ে কান্না করে দেই। বাবা আমাকে বললেন যে চল আমরা বাসায় যাই । এই প্রথম আমি বাবাকে নিয়ে আমার নতুন বাইকে চরছি ।
বাইকের নাম Hero Honda CBZ Xtreme । হিরো হোন্ডা সিবিজেড এক্সট্রিম এর ডিজাইন ও লুক স্পোর্টস লুকের মোটরসাইকেলটি হিরোহোন্ডা খুব সুন্দর ভাবেই উপস্থাপন করেছে। ৫টি ডবল স্পোক বিশিষ্ট নতুন ডিজাইনের রিম, সুসজ্জিত বর্ধিত পেট্রোল ট্যাঙ্ক, এগ্রেসিভ ট্রাপেজ হ্যালোজেন হেডলাইট, গোল্ডেন রঙের স্প্লিট হেন্ডেল যার সাথে অত্যন্ত সংবেদনশীল সামনের ফর্কটি এবং পেছনের স্প্রিং-এর গ্যাস চেম্বারের রঙ মিলিয়ে চমৎকার একটা মিল করা হয়েছে।
বাইকটীর বর্তমান বয়স ৬ বছর । বাইকের মাইলেজ হচ্ছে ৪৫/৪৮ কিমি প্রতি লিটারে । প্রথম ২৫০০ কিমি চালাতে গিয়ে আমি বাইকে সকল প্রকার নিয়ম মানবার চেষ্টা করেছি। বাইকে ৭৫০ কিমি পর্যন্ত বাইকে এর স্পিড ৪০/৫০ রেখেছি । ১১০০ কি মি হবার পর আমি বাইকে ১০০+ স্পিড আপ করেছি । বাইকে নিয়ম মত আমি মবিল/ইঞ্জিন অয়েল চেইঞ্জ করেছি। এ ছাড়া এয়ার ফিল্টার ও অয়েল ফিল্টার ও চেইঞ্জ করেছি ।
বাইকের মবিল হিসেবে আমি শুরু হতেই এক কোম্পানির মবিল ব্যবহার করেছি Mobil 4T । বাইকের টপ স্পিড ১১৯ কিমি । বাইকে ভাইব্রেশন এর ক্ষেত্রে বাইকে এ যখন ১০২+ আপ হয় তখন হাল্কা ভাইব্রেশন করে । বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম বাইকে ড্রাম ও ডিস্ক সম্বলিত। বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম অনেক ভালো। বাইক ব্রেক করলে স্লিপ কাটে নাহ।
বাইকটিতে নামকরা BYBRE ব্রান্ডের (240mm) ডিস্ক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। তবে হ্যাঁ! পিলিওন সহ উচ্চ স্পীডে ব্রেকিং রেস্পন্সে আমি সন্তুষ্ট না। ওভারঅল মোটরসাইকেলটি চালিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট। বাইক নিয়ে ভ্রমন বাইক নিয়ে আমি এখন পর্যন্ত অনেক স্থানে ভ্রমন করেছি। কুমিল্লা, ফেনী,লাক্সাম গিয়েছি। হাইওয়েতে রাইড করার সময় আমি কোনো ব্যাক পেইন অনুভব করিনি।
বাইকের সাস্পেনশন : বাইকের সামনের ও পিছনের সাস্পেনশন অনেক স্ট্রং। ভালো ফিডব্যাক পেয়েছি। পিলিয়ন নিয়ে চলায় কখনো সমস্যা হয় নি। বাইকের লাইটীং সিস্টেম এ বাইকে যে হেড লাইট আছে তার আলো বেশ ভালো। ব্যাক লাইট এর স্টাইল আমার কাছে বেশ ভালো লাগে। তাছাড়া ব্যাক লাইটের সাথেই আছে ফিক্সড ইন্ডিকেটর।
যার জন্য ইহা ভাংবার সম্ভবনা খুবই কম। বাইক এ স্পিড মিটার এনালগ। এতে আরপিএম মিটার রয়েছে। ফুয়েল মিটার ও রয়েছে। বাইকের ব্যবহার এবং যত্ন যদি সঠিক ভাবে করা হয় তাহলে বাইক অনেক বছর ব্যবহার করা সম্ভব। এবার আসি বাইকের ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি নিয়ে বাইকটি ১৪৯.২ সিসি’র (৯.১০ কিউবিক ইঞ্চি) ইঞ্জিন যা ৮৫০০ আর.পি.এম-এ ১৪.২ বি.এইছ.পি শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম।
১৪৮ কেজি ওজনের বাইকের জন্য গতি আর ক্ষমতার নিখুঁত সমন্বয়। পিকআপ রেসপন্স যথেষ্ট ভাল, যেকারনে হাইওয়েতে সহজেই ওভারটেক সুবিধা পাই। মোটরসাইকেলটি থেকে আমি টপ স্পীড পেয়েছি ১১৯ কিলমিটার/ঘন্টা। শব্দহীন ইঞ্জিন, যারা হিরোহোন্ডা হাঙ্ক ব্যবহার করেছেন তারা হয়ত এর ইঞ্জিন সাউন্ডটা উপলব্ধি করতে পারবেন। কারন হিরো তাদের এই দুইটা মোটরসাইকেলেই একই ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে।
গিয়ারের স্মুথনেস যথার্থ মনে হয়নি। ভাইব্রেশন একেবারে শুন্যের কোঠায়, একদম নাই বললাম না কারন এয়ার-কুল্ড কোন বাইকই ভাইব্রেশন মুক্ত না। বাজাজ/ টিভিএস এর তুলনায় ইঞ্জিন কম গরম হয়। মোটরসাইকেলটি যেকোনো পরিস্থিতিতে খুব ভালভাবে মোকাবেলা করার ক্ষমতা রাখে বলে আমি মনে করি । মন্তব্য : এক কথায় আমার কাছে আমার এই বাইক অনেক ভালো লেগেছে এবং এর পারফর্মেন্স অনেক ভালোই পেয়েছি।
আপনি যদি বাইকের যত্ন নিতে পারেন তেল মবিল ঠিকঠাক মতন চেইঞ্জ করেন তাহলে আপনি আপনার বাইক দিয়ে ভালো পারফর্মেন্স পাবেন আশা করি। এতক্ষন কষ্ট করে আমার রিভিউ পড়বার জন্য ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ বেল্লাল হোসেন
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।