Bajaj Pulsar NS160 ৩০,০০০ কিলোমিটার রাইড রিভিউ - সোহানুর
This page was last updated on 31-Jul-2024 04:16pm , By Shuvo Bangla
আমি সোহানুর রহমান। আমার জন্মস্থান মানিকগঞ্জ জেলার ,সাটুরিয়া থানা | আমি একটি Bajaj Pulsar NS160 বাইক ব্যবহার করি । বাইকটি আমি এখন পর্যন্ত রাইড করেছি ৩০,০০০+ কিলোমিটার। আজ আমি আপনাদের কাছে আমার বাইকটির ব্যাপারে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো ।
আমার ছোট থেকেই অনেক নেশা বাইকের প্রতি। আমি বড় হয়ে একটা মোটরসাইকেল কিনব। আমি যখন ক্লাস ৮-৯ এ পড়াশোনা করতাম তখন থেকে মোটরসাইকেল চালানো শেখা । আমি আমার এক মামার বাইক Hero Splender দিয়ে চালানো শিখছি।
তারপর থেকে বাইকের প্রতি আরো অনেকটাই নেশা বেড়ে গেল। আমার অনেক বন্ধুর বাইক ছিলো ওদের সাথে মাঝে মধ্যে ঘুরতে যেতাম তবে কখনো বলা হতো না বাইক চালানোর কথা , যদি না দেয় এইটা ভেবে । এভাবে কাটতে থাকে দিন আমার এস এস সি পরীক্ষা শেষ করে আমি গ্রামের বাড়ি থেকে চলে আসি ঢাকাতে।
তার পর থেকে বাইকের জন্য বাসায় বলি কিন্তু কাজ হয় না। ইসু ছিলো অনেক গুলো এর মধ্যে অন্যতম ছিলো বংশের ছোট ছেলে এবং বাবা মায়ের আদরের এক মাত্র ছেলে। এর পর কাজিনের বিয়ে ঠিকঠাক হয় বিয়ে সম্পুর্ন ও হয় কাজিনের শশুড় বাড়ি এক জেলায় হলেও ছিলো মোটামুটি ৩০ কিলোমিটার দূরে এর পর থেকেই বোন জামাই এর বাইক দিয়েই শুরু হয় বাইক চালানোর যাত্রা।
কিন্তু বাইক কেনার জন্য যতোই বাড়িতে বলিনা কেন কোন কাজ আসে না। এর মাঝে শুরু হয়ে আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষও করে ফেললাম। তবে বলে রাখা ভালো আমার RTR বাইক অনেক পছন্দের ছিলো এরপর আমি সব সময় ইউটিউবে RTR এর রিভিউ দেখতাম।
বাইকবিডির রিভিউ গুলো দেখতাম। হটাৎ RTR 160 বাইকের ডিসকাউন্ট অফার শুরু হয়। বাসায় চাপাচাপি করলেও ওই যে ছিলাম সবার আদরের ছোট ছেলে, ছোট ভাই কারো সাপোর্ট পেতাম না। এরপর আমার জন্মদিন আবার তার কিছুদিন দিন ই আমার রেজাল্ট দেয় আল্লাহর রহমতে রেজাল্টটা ভাল হয়।
রেজাল্ট-এ বাড়ির সবাই অনেক খুশি হয় ওহ্ হ্যা আমার নানির অনেক আদরের নাতি ছিলাম আমি। অন্যদের থেকে একটু বেশি-ই আদর করতো আমায়। বাইক পাওয়ার পিছনে তার সব থেকে বড় অবদান আছে। রেজাল্ট শুনার পর বড় ভাবী,নানি আম্মাকে বলে এখন বাইক দেওয়াই যায়।
কিন্তু আমি তেমন কিছু বলি না যখন দেখলাম সবাই বলছে আবার আম্মা তেমন ভাবে মানাও করছে না এই সুযোগে বলে দিলাম আম্মা আমার বাইক লাগবে আমিও যেই কথা সেই কাজ বাসায় সবাই রাজি হয়ে যায়। এখন কোন বাইক দিবে ! আমি বলে দেই RTR এর কথা কিন্তু আম্মার পছন্দের বাইক ছিলো Yamaha Fezzer, Bajaj Pulsar ।
তবে তখন বাজেট কম হওয়ায় Fezzer এর জন্য অপেক্ষা করতে বলে কিছুদিন কিন্তু তখন অপেক্ষা করা ছিলো আমার কাছে বিশাল বেপার কোন ভাবেই আমার পক্ষে অপেক্ষা করা সম্ভব ছিলো না। এর পর যেই দিন যাবো বাইকের জন্য তার আগে শুনি RTR DD Blue টা নেই। এখন কি করি কয়েক জায়গায় খুজেও পাই না।
এরপর কয়েকজন আমাকে সাজেস্ট করে Pulsar UG5 তখন মাত্র লঞ্চ করছে আম্মার-ও দ্বিতীয় চয়েজ ছিলো এইটা আম্মাও রাজি এইটা দিতে । সময়টা 29-Oct-2019 সকালে আম্মা সহ কয়েকজন মিলে গেলাম Uttara Motor’s এর অনুমোদিত বাজাজ এর শোরুম শুভ বাজাজ মানিকগঞ্জ এ তখন Pulsar UG5 বাইকটাও ছিলো না স্টক শেষ আবার চলছিলো ধর্মঘট তাই বাইক বর্ডারে আটকে ছিলো এখানেও কিছু দিন অপেক্ষা করার কথা বলে।
কিন্তু আমার অপেক্ষা করা ছিলো অসম্ভব এর মতো বাইক কেনার আগের রাত আমি কিভাবে কাটাছি আমি নিজেও জানি না এক এক মিনিট মনে হচ্ছিলো ১ মাসের মতো (এই অবস্থাটা অনেক বাইকার ভাইরা হয়তো ফিল করেছেন )। বাজাজ এর শোরুমে যাবার পর দেখি একটাই Bajaj Pulsar Ns 160 Red Colour ডিসপ্লে করা আছে ।
তারপর বাজেট নিয়ে একটু মুড়ামুড়ি হলেও বাইকটি ক্রয় করি ১,৯৮,৫০০ টাকা দিয়ে । তারপর বাইকটি বড় ভাই চালিয়ে বাসায় নিয়ে আসে আমি থাকি পিলিয়ন সিটে। কিনে আনার পর সারা বিকেল বাইক চালিয়েছি । ওই দিনটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো স্মৃতি হয়ে থাকবে সারাজীবন।
Bajaj Pulsar NS160 বাইক নিয়ে কিছু কথা
Bajaj Pulsar Ns 160 বাইকটিতে রয়েছে -
160.3cc Oil Cooled, 4 Stroke DTSi 15.5 ps@ 8500 rpm ইঞ্জিন। ৫ টি গিয়ার। বাইকটির ওজন 142 kg। পিছনের চাকা 110/80-17 এতে কর্নারিং করতে মোটা চাকার তুলনায় তেমন সমস্যা হয় না। সামনের চাকা 80/100-17। আরো রয়েছে DC Headlight যা শীতের কুয়াসায় দেখতে অনেক সাহায্য করে। বাইকটি সিংগেল ডিক্স ব্রেকিং সিস্টেম হলেও অনেক ভালো পারফরম্যান্স পাওয়া যায়।
বাইকটিতে ব্যবহার করা হয়েছে আন্ডারভেলি এক্সোস্ট , এর জন্য সাউন্ড কোয়ালিটি মিষ্টি না আসলেও এর ইঞ্জিনের শব্দ অনেক সুন্দর ।
ব্রেকিং পিরিওড -
ব্রেকিং পিরিওড মেন্টেন করেছি ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। প্রথম অবস্থায় ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেছি ৩০০ কিলোমিটার এর পর থেকে ১০০০-১২০০ কিলোমিটার পর পর। আমি শুরু থেকেই মতুল 20w50 গ্রেড এর ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করি। নরমালি ১২০০ মিলি এবং মবিল ফিল্টার চেঞ্জ করলে ১৩৫০ মিলি ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করি কোম্পানি থেকে বলা আছে। এবং মাঝে মধ্যে Liqui Moly, Motorex 20W50 ব্যাবহার করেছি। তবে Mutul 20w 50, Technosynthese এই ইঞ্জিন অয়েল এর পারফরম্যান্স বেশি ভালো পেয়েছি ।
সার্ভিসিংঃ-
৩ টা Free সার্ভিস এবং ২-৩ হাজার কিলোমিটার পরপর পেইড সার্ভিস করিয়েছি। বাইকের ২ টা ফ্রি সার্ভিস সম্পন্ন করেছি Shovo Bajaj, Manikganj থেকে এবং ১ টি Bajaj Fair,60-feet,mirpur Ns Club of Bd এর ফ্রি সার্ভিস ক্যাম্পিং থেকে। বাইক টিকে আমি আমার নিজের থেকেও বেশি যত্ন করি। যখন যা লাগে সময় মতো দেওয়ার চেষ্টা করি।
মাইলেজ -
হাইওয়েতে মাইলেজ পেয়েছি ৩৮-৪০ এবং সিটিতে জ্যামে ৩৫-৩৮ । মাইলেজ বাইক কন্ডিশন এবং রাইডার এর রাইডিং এর উপর অনেকটাই নির্ভর করে ।
ট্যুর -
আমি বেশ কিছু জেলয় ট্যুর করেছি। ইচ্ছা আছে ২ চাকায় পুরো দেশ ঘুরে দেখার। ঢাকা,টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুরা, রংপুর, দিনাজপুর, হিলি বর্ডার, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজিপুর, কেরানিগঞ্জ সহ আশে পাশে অনেক জায়গায় এখন পর্যন্ত ভ্রমন করেছি ।
বাইকে আমি টপ স্পিড পেয়েছি ১৩২ ঢাকা-টাঙ্গাইল হাইওয়েতে। বাইক এর হ্যান্ডেলিং পজিশন ভালো হওয়ার জন্য ব্যাক পেইন তেমন হয় না।
Bajaj Pulsar NS160 বাইকের ভালো দিকসমূহ -
- সিটিং পজিশন।
- ব্রেকিং সিস্টেম।
- গতি নিয়ন্ত্রণ।
- হ্যান্ডেলবার পজিশন।
- ইঞ্জিনের আন্ডার ভ্যালি এক্সোস্ট।
- মাইলেজ।
- অয়েল কুল্ড ইঞ্জিন।
Bajaj Pulsar NS160 বাইকের খারাপ দিকসমূহ -
- চাকা চিকন ।
- প্লাস্টিক বডি।
- পার্টসগুলো সব জায়গায় পাওয়া যায় না।
- বসার ছিট অনেক শক্ত।
- কস্টক হর্নের সাউন্ড অনেক কম।
- ইঞ্জিন অয়েল ১২০০ মিলি দিতে হয়।
- ইঞ্জিনের ভিতর থেকে আলাদা একটা সাউন্ড আসে।
- সিংগেল ডিক্স ব্রেক।
আমি ৩০ হাজার কিলোমিটার রাইড করে এই কয়েকটি খারাপ দিক পেয়েছি তবে পার্টস এর ভোগান্তি সব থেকে বেশি। বাইকটি নিয়ে আমার চূড়ান্ত কথা হলো , এই বাইকটি সবদিকেই আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে। বিশেষকরে এই বাইকের লুকিং, পাওয়ার, কোন্ট্রোলিং এবং এর মাস্কুলার লুকস। ধন্যবাদ ।