Bajaj Pulsar 160NS এর ফিচার রিভিউ
This page was last updated on 08-Jul-2024 10:30pm , By Shuvo Bangla
সুখবর হচ্ছে আমরা আশা করছি যে সরকার সিসি লিমিটের প্রতি কিছুটা ছাড় দেবে এবং সিসি লিমিট ১৬৫ সিসিতে উন্নীত হবে। এবং, এর ফলে হয়তো আমরা কিছু নতুন বাইকের পারফর্মেন্স এর সাক্ষী হবার সুযোগের দারপ্রান্তে রয়েছি। সিসি লিমিট বেড়ে যাবার খবরের পর থেকেই যে বাইকটি সম্পর্কে অন্যতম বেশি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে Bajaj Pulsar 160NS. আজকে আমরা আলোচনা করবো বাজাজ পালসার ১৬০এনএস সম্পর্কে, এবং আশা করি আমাদের এই বাজাজ পালসার ১৬০এনএস ফিচার রিভিউ এর মাধ্যমে সকলেই বাইকটির সম্পর্কে একটি প্রচ্ছন্ন ধারনা পাবেন।
Bajaj Pulsar 160NS এর ফিচার রিভিউ
বাজাজ ২০১২ সালে বাজাজ পালসার ২০০এনএস এর মাধ্যমে এনএস সিরিজের যাত্রা শুরু করে। এই এনএস সিরিজ পালসারপ্রেমীদের মধ্য একটি নতুন ক্রেজ এর সৃষ্টি করে। শুধুমাত্র ভারতেই নয়, বরং বাংলাদেশেও এই ক্রেজ তীব্র আকার ধারন করে, যদিও সিসি রেস্ট্রিকশনের কারনে এই সিরিজের বাইক এখনো আমাদের দেশে আসেনি। আমাদের আশা ছিলো যে বাজাজ হয়তো আমাদের দেশের জন্য এনএস সিরিজের অন্তত একটি ১৫০ সিসি ভার্শন ডেভেলপ করবে।
আমাদের এবং বাংলাদেশের বাইকারদের এই আশা বাস্তবে রূপ নেয়নি। ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশের মার্কেটে Bajaj Pulsar AS 150 বিক্রি শুরু হয়। পালসার এএস সিরিজ তৈরী করা হয়েছে পালসার এনএস সিরিজের উপর নির্ভর করে। তবে, এএস ডিজাইন করা হয়েছে সম্পূর্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে, মূলত এডভেঞ্চার এবং ট্যুরিং এর জন্য। একারনেই এটাক এএস ট্যাগ দেয়া হয়েছে, যার পূর্নরূপ হচ্ছে এডভেঞ্চার স্পোর্টস।
অন্যদিকে, এনএস এর পূর্নরূপ হচ্ছে নেকেড স্পোর্টস। এটা রেগুলার স্ট্রীট রাইডিং এর জন্য ডেভেলপ করা নেকেড সিরিজ।এরফলে, এনএস এবং এএস সিরিজের বাইকগুলোর এক্সটেরিয়র, উদ্দেশ্য, ইঞ্জিন পারফর্মেন্স এবং টিউনিং সম্পূর্ন ভিন্ন। এবং একারনেই পালসার১৫০এএস লঞ্চ হবার পরেও বাংলাদেশের পালসারপ্রেমীরা এনএস এর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো। আশার কথা হচ্ছে, আমরা বাংলাদেশে ১৬৫ সিসি বাইক আনার পারমিশন পাবার খুব কাছে চলে গিয়েছি, তাই খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে পালসার ১৬০এনএস আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
Bajaj Pulsar 160NS – লুকস এবং ডিজাইন
এপেয়ারেন্স এর দিক থেকে বাজাজ পালসার ১৬০এনএস অসাধারন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একটি বাইক।এর রাগত স্টাইল একে সম্পূর্ন রাফ একটি পুরুষালি ভাব দেয়। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত এবং মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত এটাকে সম্পূর্ন ইউনিকভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা পালসার ২০০এনএস এর ভাবমূর্তি ধরে রেখেছে। বাজাজ পালসার ১৬০এনএস একটি পেশীবহুল কেনেড ডিজাইনের স্পোর্টস মডেল।
এর হেডল্যাম্প, টেইলল্যাম্প, ফুয়েল ট্যাংক এবং বডি প্যানেল বাজাজ পালসার সিরিজের আইকনিক ডিজাইন এর উপর নির্ভর করে তৈরী করা হয়েছে। তবে, এনএস সিরিজে রয়েছে আরো বেশি মাসল, আরো বেশি বাক, এবং আরো বেশি শার্প অংশ।এবং, এসবকিছু মিলিয়েই পালসার ১৬০এনএস দেখতে আরো বেশি আক্রমনাত্মক । এছাড়াও, বডি ডাইমেনশন এবং ফ্রেমেও পরিবর্তন এসেছে।বাজাজ পালসার ১৬০এনএস এর ফ্রেমটি হচ্ছে টুইন টিউব ডায়মন্ড ফ্রেম যার গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এবং হুইলবেজ অন্যান্য মডলের থেকে ভিন্ন। আইকনিক ফুয়েল ট্যাংকটিতে আরো বেশি মাসল এবং কাউলিং যুক্ত হয়েছে। এর প্লাস্টিক প্যানেলে গ্লসি এবং ম্যাট – দুই প্রকারের ফিনিশিংই রয়েছে।
বাইকটির ইঞ্জিনেও বেটার কুলিং এর জন্য দুটি এয়ার স্কুপ এবং একটি প্লাস্টিক বেলি প্যান দেয়া হয়েছে । এনএস ১৬০ এর আকর্ষনীয়তার অন্যতম মূলবিন্দুতে রয়েছে এর বিশালকায় এক্সহস্ট পাইপ। এর আন্ডার বেলী এক্সহস্ট ইঞ্জিনের ঠিক নিচেই রয়েছে, এবং এক্সহস্ট সিস্টেমের ক্কোন অংশই রিয়ার সুইং আর্মকে ছাড়ায়নি।
আরেকটি পরিবর্তন হচ্ছে এর পেছনের মাডগার্ড এর ডিজাইনটি। এটাকে সরাসরি সুইং আর্ম এর সাথে বসানো হয়েছে। পেছনের টেইল ল্যাম্প এবং শার্প এন্ডিং এর সাথে এই মাডোগার্ডটিকে অপূর্ব দেখা যায়। এর সীটটি আগের চাইতে আরো বেশি স্পোর্টি হয়েছে, এবং একই সাথে আরামও নিশ্চিত করেছে। সবমিলিয়ে, বাজাজ পালসার ১৬০এনএস তার বড়ভাই, বাজাজ পালসার ২০০এনএস এর থেকে সকল মূল উপাদানই পেয়েছে।
Bajaj Pulsar 160NS – হুইল, ব্রেক এবং সাসপেনশন
বাজাজ পালসার ১৬০এনএস এর চাকাগুলো হচ্ছে ১০টি স্পোক সাপোর্টেড এলয় রিম। এদের ডিজাইন দেখতে ঠিক পালসার ২০০এনএস এর মতোই, তবে পরিমাপ আলাদা। সামনের চাকা প্রায় একরকম হলেও পেছনের টায়ারটা কিছুটা চিকন, ১১০ মিমি সাইজের। উভয় টায়ারই টিউবলেস টায়ার। পালসার ১৬০এনএস এর ব্রেকিং সিস্টেমটি ২০০এনএস এর থেকে অনেকটাই আলাদা। এনএস২০০ এর উভয় চাকাতেই হাইড্রলিক ব্রেক রয়েছে, তবে এনএস ১৬০ এর কেবলমাত্র সামনের চাকাতে ডিস্ক ব্রেক রয়েছে, এবং পেছনের চাকাতে ড্রাম ব্রেক রয়েছে।
একটি স্পোর্টস বাইক হিসেবে বাজাজ পালসার ১৬০এনএস রিয়ার মনোশক সাসপেনশন সহকারে ডিজাইন করা হয়েছে, যার ট্রাভেল হচ্ছে ১২০মিমি। এই মনোশকটি নিট্রোক্স গ্যাস ক্যানিস্টার এর যুক্ত, এবং এই সাসপেনশনটিকে সরাসরি পেছনের সুইং আর্ম এর সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। বাইকের সামনের সাসপেনশনটি একটি ১২০ মিমি ফ্রন্ট ট্রাভেল সমৃদ্ধ একটি টেলিস্কোপিক হাইড্রলিক শক এবজর্ভার।
Bajaj Pulsar 160NS – রাইডিং এবং কন্ট্রোল
বাজাজ পালসার ১৬০এনএস এর সাইডিং পজিশন ফুল স্পোর্টিও নয়, আবার কমিউটার বাইকের মতোও নয়। এর রাইডিং স্টাইল আপরাইট মোড এবং স্পোর্টি মোড এর একটি মিশ্রন।বাইকটির হ্যান্ডেলবার স্প্লিট টাইপের এবং এটা আপরাইট পজিশনে সেট করা, তবে গ্রিপের উচ্চতা কিছুটা নিচু, অনেকটা কমিউটার পজিশনে। বাইকটির রাইডার সিটিং পজিশন আপরাইট হলেও ফুটরেস্ট এর অবস্থান সম্পূর্ন স্পোর্টস মড এর মতো। কাজেই, রাইডারকে বাইকটি সেমি স্পোর্টস মোডে রাইড করতে হবে। কাজেই, বাজাজ পালসার ১৬০এনএস বাইকটির রাইডীং অনেকটাই আক্রমনাত্মক হলেও আরামদায়ক।
Bajaj Pulsar 160NS – ইঞ্জিন এবং পারফর্মেন্স
বাজাজ পালসার এনএস ১৬০ এর ইঞ্জিনটি হচ্ছে সম্পূর্ন নতুন একটি ১৬০.৩ সিসি ইঞ্জিন। এর সাথে এনএস২০০ এর প্রচুর মিল পাওয়া গেলেও এএস ১৫০ এর সাথে প্রচুর ব্যতিক্রম রয়েছে। পালসার ১৬০এনএস এর ইঞ্জিনটি হচ্ছে একটি সিঙ্গেল সিলিন্ডার, ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন। ইঞ্জিনটিতে চারটি ভালভের পাশাপাশি টুইন স্পার্ক প্লাগ রয়েছে। ইঞ্জিনটিতে অয়েল কুলড কুলিং সিস্টেম রয়েছে যা এনএস২০০ থেকে এসেছে। এনএস১৬০ এর ভিশিয়াস এয়ার ফিল্টার এয়ার ইনটেক এ অধিক বায়ুপ্রবাহ নিশ্চিত করে যার ফলে ইঞ্জিন দ্রুত থ্রটল রেস্পন্সে সক্ষম হয়। দিনশেষে এই ১৬০ সিসি ইঞ্জিনটি সর্বোচ্চ ১৫.৫পিএস শক্তি এবং ১৪.৬এনএম টর্ক উতপন্ন করতে সক্ষম – যা বাজাজের বাষ্যমতে, সম্পূর্ন সেগমেন্টে রাজত্ব করবার জন্য যথেষ্ট !
বাজাজ পালসার ১৬০এনএস এর ফুল স্পেসিফিকেশন
Bajaj Pulsar 160NS – ফিচারস
বাজাজ পালসার ১৬০এনএস বাইকটিতে অসাধারন কিছু ফিচার রয়েছে।উপরের আলোচনায় আমরা ইতিমধ্যেই অনেক ফিচার নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে, একটি পরিপূর্ন ভিউ পাবার জন্য আমরা বাইকটির ফিচারগুলোকে শর্ট পয়েনেটে সাজিয়েছি।
- নতুন আকর্ষনীয় পেশীবহুল ও পুরুষালী চেহারা।
- আক্রমনাত্মক ও স্পোর্টি সেমি-কমিউটিং রাইডিং পজিশন
- স্টাইলিশ, স্পোর্টি, এবং একই সাথে প্রশস্ত সিট এবং স্পোর্টি স্প্লিট হ্যান্ডেলবার।
- সম্পূর্ন নতুন ১৬০.৩ সিসি অয়েল কুলড ফোর ভালভ ডিটিএস-আই ইঞ্জিন।
- মাল্টি ম্যাপ সিডিআই ইগনিশন।
- ভিশিয়াস এয়ার ফিল্টার যা ভালো এয়ার ইনটেক দেয়।
- ফুল ডিসি ইলেকট্রিকাল সিস্টেম।
- পাইলট ল্যাম্পের ইউনিক ডীজাইনের সাথে শক্তিশালী হেডল্যাম্প।
- ক্লিয়ার লেন্সের ইন্ডীকেটর।
- আন্ডার বেলী এক্সহস্ট।
- অধিক গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স।
- গ্যাস চার্জড মনোশক এবজর্ভার।
- স্প্লিট এবং এক্সটেন্ডেড স্পোর্টি মাডগার্ড।
- সবমিলিয়ে, এই সেগমেন্টের জন্য সম্পূর্ন নতুন একটি প্যাকেজ।
পাঠকেরা, এই ছিলো Bajaj Pulsar 160NS এর ফিচার নিয়ে বিস্তারিত। আমরা জানি যে অনেকেই বাইকটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, তাই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি বাইকটি সম্পর্কে সকল তথ্য ও ফিচার সকলের কাছে পৌঁছে দিতে। আশা করি সকলেরই এই রিভিউটি ভালো লাগবে। কারো কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্টবক্সে কমেন্ট করতে পারেন, এবং, আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।