Bajaj Platina ES ২০০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - নাজমুল
This page was last updated on 01-Aug-2024 07:18pm , By Shuvo Bangla
আমি নাজমুল কোকাব । আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমার Bajaj Platina ES বাইকের মালিকানা রিভিউ। আমি শিমুলতলি গাজীপুর বসবাস করি ।প্রথম আমি যখন বাইক চালানো শিখি তখন আমার কোন বাইক ছিলো না এমন কি আমাদের পরিবারের কারো বাইক ছিলো না, যাই হোক প্রথম বাইক চালানো শিখেছিলাম বাইকটি ছিলো ইয়ামাহা আর এক্স।
বাইকিং ভালো লাগার কারন গুলো -
- নিজস্ব একটা পরিবহন ব্যাবস্থা
- কোথাও যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না
- বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া গুলোর কারনে আসলে ভাললেগে গেছে ( এটাই প্রধান কারন )
- আমি মনে করি প্রতিটি মানুষ ঘুরতে ভালোবাসে, আমিও ব্যাতিক্রম নয় তাই বাইক নিয়ে ঘুরাঘুরি করার জন্য বাইক ভালোলাগা
- বাইকে চলাচল একটা স্মার্টনেস
আমার বাইকটি বেছে নিয়েছি আমি দির্ঘ ১ বছর গবেষণা করে। আমি প্রথম প্রাধান্য দিয়েছিলাম মাইলেজকে। সেই হিসেবে অনেক ঘাটাঘাটি করে আমার মনে হয়েছে Bajaj Platina ES আমার জন্য পার্ফেক্ট হবে।তা ছাড়া নিত্যদিনের ব্যাবহারের জন্য বাইকটি কিনেছি কারন আমি প্রতিদন সন্ধ্যায় গাজীপুর থেকে ঢাকায় যেয়ে ক্লাস করতাম তাই ভেবেছি ক্লাসের পর বা আগে রাইড শেয়ার করে কিছু উপার্যন করা যাবে এবং করেছি ও। এর জন্য আমার বাইকটি আমার জন্য বেছে নেয়া।
বাইকটির ৯৭০০০ টাকায় ক্রয় করেছি এবং রেজিস্ট্রেশন সহ মোট খরচ পরেছে ১১০০০০ টাকা। বাইকটি আমি কিনেছি Bajaj Showroom উত্তরা মটরস এর একটি রিটেইলার আনিকা মটরস থেকে এটি গাজীপুর চৌরাস্তায় অবস্থিত ।
বাইক কিনতে যাওয়ার দিনের ঘটনার মধ্যে আমার তেমন কোন ঘটনা নেই শুধু মনে হচ্ছিলো রাস্তা ফুরাচ্ছে না সময় যাচ্ছে না, কিন্তু বাইক কিনে আসার পর প্রথমই বন্ধুদের সামনে যেয়ে চমকে দিয়েছিলাম যা আমার বন্ধুরা এখনো মাঝে মাঝে বলে।
দুঃখের বিষয় প্রথমেই বাইকটি চালিয়ে আমি বাসায় নিয়ে আসতে পারিনি, আমার বড় ভাইয়ের পিছনে বসে বাসায় আসতে হয়েছে এবং বাসার সামনে ভাইয়াকে নামিয়ে দিয়েই ফ্রেন্ড দের কাছে চলে গিয়েছিলাম, প্রথম বাইক হাতে পেয়ে প্রথমেই মনের ভিতর থেকে একটা কথা ধাক্কা দিয়েছে এটা আমার।আমার বাইকটি চালানোর মুল কারন ছিলো আমার ইউনিভার্সিটিতে যাতায়াত এবং পাশাপাশি কিছু উপার্যন। এসব দিক থেকে আমার বাইকটি পার্ফেক্ট ছিল ।
বাইকের ফিচার -
- এটি একটি কমিউটার বাইক ।
- এটিতে ব্যাবহার করা হয়েছে ১০২ সিসির ইঞ্জিন ।
- বাইকটির সামনে পিছনে ড্রাম ব্রেক ইউজ করা হয়েছে ।
- সেই সাথে চাকা ব্যাবহার হয়েছে পিছনে ৩০০*১৭ ও সামনে ২৭৫*১৭ যা কিনা টিউব সহ ceat টায়ার।
- বাইকে ডিসি পাওয়ার সিস্টেম দেওয়া হয়েছে যার কারনে পিকাপের সাথে আলোর কোন কম বেশি হয় না।
- বাইকটির সামনে একটি এল ই ডি পার্কিং লাইয়ট ব্যাবহার করা হয়েছে যা কিনা দুর্ঘটনার হাত থেকে বাচানোর সহযোগিতা করে।
- তাছাড়া বাইকে রয়েছে আরাম দায়ক সিট যা অন্যান্য যে কোন বাইকের চেয়ে বেশ বড়।
- বাইকে ব্যাবহার করা হয়েছে এনালগ টেকো মিটার।
- বাইকটিতে ৪ টি গিয়ার রয়েছে এবং সবগুলো গিয়ার সামনে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পিলিয়নের ফুট রেস্টের জন্য রয়েছে আরামদায়ক ব্যাবস্থা যা কিনা কোন বাইকে এত সুন্দর নেই।
- বাইকটিতে ব্যাবহার হয়েছে দুই স্প্রিং এর সাস্পেন্সন যাতে অফ রোডে ও ঝাকুনি অনেকটা কম অনুভুত হয়।
বাইকটি চালানোর সময় কোমর ব্যাথা ঘার ব্যাথা হাতের কব্জি ব্যাথা এগুলো কখনই হয়নি আসলে প্লাটিনা কম্ফোর্টেক আসলেই কম্ফোর্টেবল।
আমার বাইকটি ২০,০০০ কিলোমিটার প্লাস চালানো হয়েছে এর মধ্যে Bajaj Bike থেকে দেয়া ৪ টি ফ্রি সার্ভিস ও ৩ টি পেইড সার্ভিস করেছি এবং আরো একটি পাওনা রয়েছি। বাইকটি ১ বছর ৬ মাস প্রায় চালানোর মধ্যে একটি সমস্যার সম্মুখিন হয়েছি তা হলো ক্লাচের ক্যাবলটি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো তা ছাড়া আর কোন সমস্যা হয়নি আজ পর্যন্ত।
বাইকটি ৩০০০ কিলো পর্যন্ত আমি ব্রেকিং পিরিয়ড হিসেবে চালিয়েছি এবং তখন মাইলেজ পেতাম ৫০ যা সামান্য কম বেশি, এর পর একবার তেলের লাইন কমানোর কারনে পেয়েছিলাম ৭০ কিন্তু তখন স্টার্ট প্রব্লেম হতো তাই আবার টিউনিং ঠিক করে নিয়েছি এবং এখন ৬০ মাইলেজ পাই এর কম পাই না।আমার বাইকে তেমন কোন যত্ন করা প্রয়োজন হয় না, নিজের বাইক নিজে যন্ত নেই, চালাই , তেল ভরি ৯০০ কিলো পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করি আর সার্ভিসিং এ নেই বাজাজের বইয়ে লিখা সময় অনুযায়ী।
আমার বাইকে ব্যাবহার করা ইঞ্জিন অয়েলের নাম Mobil super 4T গ্রেড 20w50 , দাম ৪৫০ টাকা তবে বাইরে থেকে কেনা বেশি নিরাপদ নয় আমি সবসময় বাজাজ এর শোরুম থেকে ক্রয় করি।
বাইকে এই পর্যন্ত একবার ক্লাচ ক্যাবল পাল্টাতে হয়েছে যা কিনা ঘসায় ঘসায় ছিড়ে গিয়েছিলো। আর মবিল ফিল্টার, এয়ার ফিল্টার, প্লাগ, পিছনের চাকার ব্রেক শো এবং ড্রম রাবার যেগুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অবশ্যই পরিবর্তন করতে হয়। তা ছাড়া অতিরিক্ত বড় ধরনের কিছুই পরিবর্তন করতে হয়নি।
আমার বাইকে মোডিফিকেশনের মধ্যে একটি অতিরিক্ত সুইচ লাগিয়েছি যা সামনের এল ই ডি টি দিনের বেলা অফ রোডে চলাচলের জন্য বন্ধ রাখার জন্য এবং পিছনে একটি এল ই ডি ব্লু লাইট লাগিয়েছি শখ করে, যা ব্রেক করলে জ্বল জ্বল করে, এবং দুই চাকার রিমে স্টিকার লাগিয়েছি।
বাইকটি দিয়ে আমার তোলা সর্বোচ্চ গতি ৯৫ যদিও হাল্কা বাইকে এত গতি তোলা ঠিক না আমি চেষ্টা করেছি অতি সতর্কতার সাথে, দয়া করে উৎসাহিত হবেন না।
Bajaj Platina ES বাইকটির কিছু ভালো দিক -
- মাইলেজ বেশি ।
- ঝাকুনি লাগে কম ।
- অল্প যায়গা পেলে জ্যাম থেকে সহজে বের হওয়া যায়।
- মেইন্টেনেন্স খরচ কম ।
- ছোট ফ্যামিলি নিয়ে চলাফেরার জন্য পার্ফেক্ট, কারন সিট অনেক বড়।
Bajaj Platina ES বাইকটির কিছু খারাপ দিক -
- টিউব ওয়ালা চাকা
- বাইকটির কিছু পার্টস সহজ লভ্য না, যেমন আমি ক্লাচের ক্যাবল টা খুজতে খুজতে অনেক হতাশ হয়ছি আবার ডিস্কভার বা পালসারের টা লাগে না।
- ওভারটেকিং এ কনফিডেন্স পাওয়া যায় না।
- গিয়ার শুধু মনে হয় আর একটা আছে।
- হেড লাইটে আলো কম।
বাইকটি নিয়ে আমি দূরত্বের মধ্যে নিকলি হাওর গিয়েছিলাম তখন অবশ্য বর্ষা ছিলো না, বাইকটি নিয়ে আমি হাওরের সাব মার্সেবল রোডে ঘুরে বেরিয়েছি। সাবমার্সেবল রোড গুলো পানির নিচে থাকে দির্ঘদিন তাই রোড গুলো প্রচুর ভাংগা পেয়েছি, তবু আমার বাইকটি দুর্দান্ত পার্ফরমেন্স দিয়েছে।
সব শেষে আমি বলবো এটি আমার মত মধ্যবিত্তের স্বপ্নের বাইক, কেউ যদি কমিউটার রাইডের জন্য কোন বাইক কিনয়ে চায় তাহলে আমি অনায়াসে বলবো Bajaj Platina ES বেস্ট বাইক।
আমি এক দিনে বাইক নিয়ে ২০০ এর বেশি কিলোমিটার রাইড দেই নাই ভবিষ্যতে আমার এই বাইকটি নিয়ে কক্সবাজার ও বান্দারবান যাওয়ার পরিকল্পনা আছে সবাই দোয়া করবেন ট্যুরে থাকা কালিন এবং ট্যুর পরবর্তি সময়ে ইনশাল্লাহ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
সবাই ভালো থাকবেন, হেলমেট পরে সাবধানে বাইক রাইড করবেন এক বাইকার ভাই অপর বাইকার ভাই কে সব সময় সহযোগিতা করবেন। ধন্যবাদ ।