বিশ্বব্যাপী বাইকারদের মধ্যে প্রচলিত কিছু ভুল এবং বাংলাদেশি রাইডারদের তা থেকে শিক্ষণীয় বিষয়

This page was last updated on 30-Oct-2025 02:13pm , By Badhan Roy

সারাবিশ্বে বাইক রাইডিং ও বাইক ট্রাভেলিং যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং দিন দিন এই জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তবে বিশ্বব্যাপী বাইকারগণ অসচেতনতাবশত বেশ কিছু ভুল করে থাকেন যা রাইডিং এর সময় বিপত্তির সৃষ্টি করতে পারে। আজকে আমরা বিশ্বব্যাপী রাইডারদের এই ভুলগুলো এবং তা থেকে বাংলাদেশি রাইডাররা যেসব শিক্ষা নিতে পারেন তা নিয়ে আলোচনা করব। 

 

যথাযথ রুট প্ল্যানিং ও লোকেশনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত না হওয়া

সারা বিশ্বে রাইডারদের মধ্যে অন্যতম কমন একটি ভুল হচ্ছে যাত্রা শুরুর আগে যথাযথভাবে রুট প্ল্যানিং না করা এবং সম্পূর্ণ অচেনা গন্তব্য এক্সপ্লোর করার সময় নেভিগেশনের জন্য নির্ভরযোগ্য ম্যাপ বা জিপিএস ডিভাইস না রাখা। 

যে জায়গায় ভ্রমণ করা হচ্ছে সেখানখার স্থানীয় আইন, নিয়মকানুন, সংস্কৃতি এবং বর্তমানে কোন কারনে নিরাপত্তা বা প্রশাসনিক ঝামেলা অথবা কারফিউ চলছে কিনা সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারনে অধিকাংশ রাইডার বিপদে পড়েন। আবহাওয়ার পূর্বাভাস না দেখে যাত্রা শুরু করার ফলে অনেক সময় বন্যা, ভূমিধ্বস অথবা অন্য প্রাকৃতিক দূর্যোগের মুখোমুখি ও হতে হয় অনেক সময়। 

রাইড শুরুর পূর্বে মোটরসাইকেলের যথাযথ চেকআপ না করা

অনেক বাইকার হুটহাট ডিসিশনে রাইড শুরুর আগে বাইকের বেসিক চেকআপ করেন না। লং রাইড শুরুর করার আগে টায়ারর প্রেশার, ব্রেক, লাইট এবং অন্যান্য চেকআপ না করার ফলে যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়ে বেশ ভোগান্তির স্বীকার হন অনেকে।

ওভারলোড এবং অনুপযুক্ত সেফটি গিয়ার

অনেকেই তাদের নিজের বহনক্ষমতার অতিরিক্ত মালপত্র বহন করে রাইড করেন যা বাইকের ভারসাম্য বিঘ্নিত করে দূর্ঘটনা ঘটাতে পারে। অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনায় নিজের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় গিয়ার (হেলমেট, গ্লাভস, জ্যাকেট, বুট) না পরেই অনেকে শুধুমাত্র নিম্নমানের হেলমেট পরে রাইড শুরু করেন যা একেবারেই অনুচিত।

বাজেট ম্যানেজমেন্ট নিয়ে সঠিকভাবে পরিকল্পনা না করা

অনেকেই আছেন, রাইড শুরু করার পূর্বে সঠিক বাজেট করেন না। ফলে রাইড শুরু করার পর অনেক সময় অতিরিক্ত খরচ হতে পারে, এবং দূর্গম এলাকায় হটাৎ টাকা ম্যানেজ করা কষ্টসাধ্য হওয়াতে বেশ বিপদে পড়ে যান।

অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং টাইম ম্যানেজমেন্টের অভাব

কেউ কেউ দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্রাম ছাড়া একটানা বাইক চালিয়ে থাকেন। যার সরাসরি প্রভাব শরীরের উপর পড়ে। এর ফলে চলন্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে যাওয়া বা অসুস্থ হয়ে বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। আবার অনেকেই আছেন পর্যাপ্ত সময় না নিয়ে রাইডিং কে একটি টার্গেট হিসেবে নিয়ে থাকেন, ফলে তাড়াহুড়া করতে যেয়ে দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 

পরিবেশ ও স্থানীয়দের প্রতি দায়িত্বহীনতা

বাইকারদের প্রতি সবচেয়ে বেশি অভিযোগ হচ্ছে অসংখ্য বাইকার ট্যুরিস্ট স্পটগুলোর স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে দুর্ব্যবহার বা তাদের সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা ও ব্যাঙ্গ করে থাকে। এই ধরনের ঘটনায় সামান্য ব্যাপারে কথা কাটাকাটি থেকে খুন এমনকি বিভিন্ন আইনি জটিলতার সম্মুখীন হওয়ার ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। এছাড়াও, অনেক রাইডারের বদঅভ্যাস আছে যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলা বা পরিবেশ দূষণ করার।

 

বাংলাদেশি বাইকারদের জন্য শিক্ষণীয় পরামর্শ

বাংলাদেশের জন্য উপরোক্ত ভুলগুলো থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহণ যেতে পারে। এতে করে লং রাইডে অনাকাঙ্খিত বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। 

১) ভ্রমণের পূর্বে যে লোকেশনে যাবেন সেখানকার রুট প্ল্যান ও বর্তমান প্রশাসনিক ও আবহাওয়া বিষয়ে সঠিক খোজ খবর নেওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া। 

২) লং রাইডে বের হওয়ার কমপক্ষে ২ দিন আগে বাইকের কমপ্লিট চেকআপ করে সমস্যাগুলো সমাধান করে রাইড শুরুর আগ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা। 

৩) ওভারলোড পরিহার করা ও সার্টিফাইড হেলমেট ও সেফটি গার্ড ব্যাবহার করা। 

৪) সঠিক বাজেট প্ল্যানের বাইরেও অতিরিক্ত কিছু অর্থ সাথে রাখা এবং তেল, খাবার, এবং জরুরি পরিস্থিতির জন্য আলাদা ফান্ড রাখা।

৫) অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস পরিহার করে লং রাইডের সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম বা খাবারের সময় হাতে রাখা।

৬) জরুরি পরিস্থিতির জন্য ফার্স্ট এইড কিট ও টুলবক্স সাথে রাখা।

৭) সর্বোপরি, ট্যুরিস্ট স্পট সহ সর্বক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যাক্তি অথবা অন্যান্য গাড়ি চালকদের সাথে সহনশীল আচরণ করা, যে কোন সমস্যায় ট্যুরিস্ট পুলিশ বা অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেওয়া এবং নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলা। যাতে দিনশেষে মানুষ বাইকারদের নিয়ে গর্ববোধ করে।