Bajaj Pulsar 150 ২৩,০০০ কিলোমিটার মালিকানা রিভিউ - জুবায়ের
This page was last updated on 01-Aug-2024 06:43pm , By Shuvo Bangla
আমি জুবায়ের আহমেদ। আমি চট্টগ্রামের, পতেঙ্গা, পূর্ব কাটগর এলাকায় বসবাস করি। আজ আমি আমার জীবনের প্রথম বাইক Bajaj Pulsar 150 বাইকের কিছু ভালো এবং খারাপ দিক আপনাদের কাছে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি।
Bajaj Pulsar 150 ২৩,০০০ কিমি মালিকানা রিভিউ
মূল বিষয় শুরু করার আগে আপনি যদি pulsar 150 price in bangladesh এর সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল এবং ফেসবুক ফ্যান পেজ ঘুরে দেখুন। তাছাড়া বাইক সম্পর্কিত যেকোন তথ্য পাবেন আমাদের ওয়েবসাইটে।
আমার জীবনের প্রথম বাইক Bajaj Pulsar 150 বাইকটি সিংগেল ডিক্স ২০১৭ এডিশন । Bajaj Pulsar বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় একটি ব্রান্ড। আমার বাইকটি বর্তমানে ২৩ হাজার কিলোমিটার চলেছে।
ছোটবেলা থেকেই একরকম বাইকের প্রতি আমার আগ্রহ জন্মেছিলো। বড় ভাইরা বাইক নিয়ে বিভিন্ন যায়গায় ট্যুর করতো, যা আমাকে বাইকের প্রতি আরো আকৃষ্ট করে তুলে। বাইক ভালোবাসার কারণ হয়তো লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এতটুকু বলতে পারি বাইক মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। বাইক আমার মন মানসিকতা সতেজ রাখতে অপরিসীম ভূমিকা রাখে। বাইক মানুষকে প্রকৃতির খুব কাছে নিয়ে যেতে পারে। যার কারনে বাইকিং আমি ভালোবেসে ফেলেছি।
আমি ২০১৬ থেকে বাইক চালানো শুরু করি আমার ভাইয়ের বাইকটি দিয়ে। সে সময় Bajaj Pulsar ব্রান্ডটি খুব জনপ্রিয় ছিলো এবং বর্তমানেও খুব জনপ্রিয়। আমার বাজেট এর মধ্যে Bajaj Pulsar 150 SD বাইকটি খুব ভালো মানের বাইক হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছিলো। যার কারনে আমি Bajaj Pulsar 150 SD বাইকটি ক্রয় করি।
আমার Bajaj Pulsar 150 SD বাইকটি 150 সিসি সেগমেন্ট এর একটি বাইক । এটিতে রয়েছে শক্তিশালী 150 সিসি DTSI Twin Spark DSIV complain 4-stroke, 2 valve এর DTS-i ইঞ্জিন। আমি আমার বাইকটি এখন পর্যন্ত ৪ বার সার্ভিস করিয়েছি। বাজাজ এর অথরাইজ সেন্টার থেকে সার্ভিসিং করিয়েছি। আমি বাইকে ১ লিটার অকটেন দিয়ে ৩৫-৩৭ কিলোমিটার মাইলেজ পাই । বাইকটি ২৩ হাজার কিলোমিটার চলার কারণে এখন মাইলেজ কিছুটা কম পাচ্ছি। সব কিছু চিন্তাভাবনা করেই আমি আমার Bajaj Pulsar 150 বাইকটি বেছে নিয়েছি।
বাইকটির দাম বর্তমানে ১,৭০,০০০ টাকা। বাইকটি সাধারনত আমার খালাতো ভাই বিদেশ যাওয়ার কিছুদিন আগে উত্তরা মটরস, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম থেকে কিনেছিলেন । কিন্ত সে বিদেশ চলে যাওয়ার কারনে ১ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করার পরপরই আমার কাছে বাইকটি ১,৫৫,০০০ টাকায় বিক্রয় করে।
2018 Bajaj Pulsar 150 Twin Disc In Bangladesh - Bajaj Pulsar UG5 First Impression Review!
নতুন বাইক কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম এমতাবস্থায় আমার খালাতো ভাই বিদেশ যাওয়ার সুবাদে বাইক বিক্রি করার প্রস্তাব আমাকে জানায়। তার বাইক বিক্রির কথা আমি আমার পরিবারকে জানাই এবং পরিবারের সকলের সম্মতিতে আমাকে বাইকটি কিনে দেয়। ওইদিনটি আমার জীবনের এক অন্যতম মহাখুশির দিন ছিলো। আমার আপন বড় ভাইয়ের Bajaj Pulsar বাইক ছিলো তাই আমি তার বাইক দিয়ে বাইক চালানো শিখেছি। আগে থেকে বাইক চালানো পারতাম তাই আমার বাইক চালাতে তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। তবে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে বাইক সম্পর্কে। নিজের বাইক প্রথবার চালানো অনুভুতি হয়তো আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। সেই অনুভুতি তারাই বুঝবে যারা জীবনের প্রথম বাইক প্রথমবার চালিয়েছে।
আমার বাবার ব্যবসা থাকার সুবাদে আমাকে আমার ব্যবসা দেখাশোনা করতে হয়। যার কারণে বাইকটি ব্যবহার করা হয়। আমি সময় পেলেই বিভিন্ন ট্যুরে এবং ট্রাভেলিং এ বেড়িয়ে পরি। আমার কাছে আমার বাইক চালানোর প্রধান কারণ আমার বাবার ব্যবসার দেখাশোনা করা এবং আরেকটি কারণ হচ্ছে ট্রাভেলিং করা।
Bajaj Pulsar 150 বাইকটির কিছু ভালো দিক-
- বাইকটি দেখতে অসাধারণ লাগে আমার কাছে।
- সিটিং পজিশন আমার কাছে বেশ কম্ফোর্টেবল মনে হয়।
- উভয় সাসপেনশন অফরোডে বেশ ভালো পারফরম্যান্স দেয়।
- সামনে পিছনে ব্যবহার করা হয়েছে ৯০ সেকশন এবং ১১০ সেকশন এর টায়ার।
- বাইকটির কন্ট্রোলিং খুব ভালো ।
- পার্টসগুলোর মূল্য অন্যান্য বাইকের পার্টসের তুলনায় খুব সীমিত।
Bajaj Pulsar 150 বাইকটির কিছু খারাপ দিক-
- হার্ড ব্রেক করলে পিছনের চাকা মোটামুটি স্লিপ করে।
- বাইকটি একটানা ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার চালালে ইঞ্জিনের সাউন্ড নষ্ট হয়ে যায় ।
- ব্রেকিং লেভেল কিছুটা দূর্বল।
- RPM ফুল ডিজিটাল হলে ভালো হতো ।
- পিলিয়ন সিট কম্ফোর্ট না।
আমার বাইকটি আমি অনেক যত্ন করি। আমি ২ টি চাকা ও পিছনের সাসপেন্সন পরিবর্তন করেছি যেহেতু লং ট্যুর করি । বাইকটি দিয়ে আমি টপ স্পিড তোলার চেষ্টা না করলেও মাওয়া এক্সপ্রেস হাইওয়েতে ট্যুর করতে গিয়ে টপ স্পিড ১২২ পেয়েছি হয়তো আরও স্পিড পাওয়া যেত কিন্তু আমি রিস্ক নেইনি।
বাইকটি নিয়ে ছোট/বড় অনেক ট্যুর করেছি ইনশাআল্লাহ আরো অনেক বড় স্বপ্ন রয়েছে। তবে কোনো ট্যুরে Bajaj Pulsar 150 আমাকে নিরাশ করেনি। আসলে আমার প্রত্যেকদিনই বাইক চালানোর প্রয়োজন হয়ে থাকে বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে। রাতে যখন বাসায় ফেরা হয় তখন বাবাকে পিছনে নিয়ে বাসায় আসা হয়। বাবাকে নিয়ে বাসায় ফেরার অনুভূতি অসাধারণ। আমার কাছে বাইক মানে ভালোবাসা, বাইক মানে অনুভুতি। আগে বিভিন্ন কোম্পানির ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেছি কিন্ত ৬ মাস যাবত মটুল এর সেমি সিন্থেটিক ব্যবহার করছি। ইঞ্জিন অয়েলটি খুব ভালো পারফরম্যান্স দিচ্ছে আমাকে।
২৫০০ কিলোমিটার পূর্বে আমি মাইলেজ পেয়েছিলাম ৩৯-৪০, কিন্ত পরে মাইলেজ পেয়েছি ৩৬-৩৮ কিন্ত এখন ২৩ হাজার কিলোমিটার চলেছে বিধায় মাইলেজ পাচ্ছি ৩৫-৩৭। আলীকদম, ডিমপাহাড়, থানচি, বান্দরবন একদিনের লং ট্যূরে Bajaj pulsar 150 আমাকে বিন্দু মাত্র নিরাশ করেনি। সবদিক থেকেই বাইকটি আমাকে ভালো পারফরম্যান্স দিয়েছে। বাইকটি রাইড করে, ট্যুর করে সব দিকেই আমার কাছে ভালো মনে হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আরও রাইড করার ইচ্ছা আছে। তবে খুব ইচ্ছে আছে এই Bajaj pulsar 150 নিয়েই আমি ৬৪ জেলা ট্যুর করতে বের হবো।
বাইকটি আমার ভালোবাসা, আমার আবেগ, আমার অনুভুতি। যারা Bajaj Pulsar 150 নিতে চাচ্ছেন বা নেওয়ার জন্য ভাবছেন তাদের বলছি নিশ্চিন্তে নিয়ে নেন। Bajaj Pulsar 150 বাইকের লুকস, কন্ট্রোলিং বেশ ভালো। তবে বর্তমানে ডাবল ডিস্ক ও চলে এসেছে। তবে ডাবল ডিস্ক কিংবা সিংগেল ডিস্ক কোনোটাই খারাপ না । ভালো থাকুক সকল বাইকার ভাই-বোনরা। সকলের জন্য রইলো শুভ কামনা। ধন্যবাদ ।
লিখেছেনঃ জুবায়ের আহমেদ
আপনিও আমাদেরকে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠাতে পারেন। আমাদের ব্লগের মাধ্যেম আপনার বাইকের সাথে আপনার অভিজ্ঞতা সকলের সাথে শেয়ার করুন! আপনি বাংলা বা ইংরেজি, যেকোন ভাষাতেই আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ লিখতে পারবেন। মালিকানা রিভিউ কিভাবে লিখবেন তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন এবং তারপরে আপনার বাইকের মালিকানা রিভিউ পাঠিয়ে দিন articles.bikebd@gmail.com – এই ইমেইল এড্রেসে।